ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ — দুটিরই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এখন তাদের মস্তকে। তবুও ২০২৩ বিশ্বকাপে এসে প্রথম অঘটনের শিকার হয়েছে তারাই। টুর্নামেন্ট শুরুর ১১তম দিনে প্রথম ‘চমক’ দেখল বিশ্বকাপ। দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে কখনোই সুখস্মৃতি সঙ্গী হয়নি আফগানিস্তানের। প্রাপ্তি বলতে ছিল শুধু ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডকে হারানো। এর পর থেকে সেই যে হারের বৃত্তে তাঁরা বন্দী হয়েছে, আর কখনো বের হতে পারেনি।
২০১৯ বিশ্বকাপের গোটা আসরটাই তাঁরা কাটিয়েছে জয়শূন্য থেকে। ২০২৩ বিশ্বকাপের শুরুটাও হয়েছিল টানা দুই পরাজয় দিয়ে। তবে সবাইকে বিস্ময়ে ভাসিয়ে তৃতীয় ম্যাচে তাঁর লিখল ইংলিশবধের গল্প।
ইংলিশদের সামনে ছিল ২৮৫ রানের লক্ষ্য। দিল্লীর এই উইকেটেই রীতিমত রান উৎসবে মেতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪২৮ রানের পাহাড়ে চড়েও অবশ্য সে ম্যাচে লঙ্কানদের ইনিংসের সময় স্বস্তিতে থাকেনি প্রোটিয়ারা। লঙ্কানরাও যে পেরিয়েছিল ৩০০ রান। সব মিলিয়ে তাই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং লাইন আপে ঠাঁসা ইংল্যান্ডের জন্য ২৮৫ রানের লক্ষ্যটা সহজই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু রানপ্রসবা পিচটা হঠাতই যেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় রশিদ-মুজিব-নবী স্পিনত্রয়ী। তাদের স্পিন ঘূর্ণিতেই লক্ষ্য থেকে ৭০ রান দূরে থাকতে অলআউট হয় ইংলিশরা। ৬৯ রানের ঐতিহাসিক জয় পায় আফগানিস্তান।
ইংল্যান্ড মূলত ম্যাচটা হারলো কোথায়? শুরুতেই রহমানুল্লাহ গুরবাজের ব্যাটিং তাণ্ডবে কিছুটা ব্যাক ফুটেই চলে গিয়েছিল ইংলিশ বোলাররা। এরপর আফগান লোয়ার মিডল অর্ডারদের বিপক্ষেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি ক্রিস ওকস, স্যাম কারেনরা।
এ দুই ইংলিশ পেসার সেদিন ৮ ওভারে ৮৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। যেখানে আফগানিস্তানের তিন স্পিনার মিলে ১০৪ রানে নিয়েছেন ৮ উইকেট। আর এখানেই একটা স্পষ্ট ব্যবধানে ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছে ইংলিশরা।
এ ছাড়া ব্যাটিং ইনিংসে ইংলিশদের হয়ে ২০-এর উপরে ইনিংস খেলেছেন মাত্র ৩ ব্যাটার। ডেভিড মালান, হ্যারি ব্রুক আর আদিল রশিদ ছাড়া কেউই ব্যাট হাতে ২০ পেরোতে পারেননি। সিংহভাগ ব্যাটারই ফিরেছেন উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই। সব মিলিয়ে দিনশেষে আফগানিস্তানের দেওয়া ২৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং ব্যর্থতাটাই ইংলিশদের এ ম্যাচ হারের নেপথ্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের পর আফগানিস্তানের কাছেও হার! টুর্নামেন্টের ১৩ ম্যাচ শেষে যে পয়েন্ট তালিকা, ইংল্যান্ডের অবস্থান সেখানে পঞ্চম। রানরেট -০.০৮৪। ২০১৯ বিশ্বকাপে যে দাপুটে ক্রিকেট খেলে ইংলিশরা বিশ্বকাপ জিতেছিল, তার ছাপ এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে কমই। ইংল্যান্ডের জন্য এখন প্রতিটি ম্যাচই বলতে গেলে ফাইনাল।
লিগ পর্বের বিশ্বকাপে প্রতিটি দল খেলবে নয়টি করে ম্যাচ। তিন ম্যাচ খেলার অর্থ হচ্ছে, তিন ভাগের এক ভাগ শেষ। আর সেই এক ভাগে ইংল্যান্ড যে কোনো সংজ্ঞায়নেই ব্যর্থ। শেষ ৪ নিশ্চিত করতে হলে তাই বেশ খানিকটা সংগ্রামই করতে হবে বাটলারদের।