উমরাও জান উমরান মালিক!

১৫০ কিলো/ঘন্টার বেশি গতি। এ তো মামুলি ঘটনা। এর জন্যে বাড়তি কিছুই করা লাগে না ভারতের নতুন গতি বিস্ময় উমরান মালিকের। ভারতের জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই পেসার রীতিমত গতির ঝড় তুলছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। ইতোমধ্যে তাঁকে নিয়ে আলোচনা মশগুল ভারত থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশ্বের বহু কিংবদন্তিরা।

এবার তো রীতিমত বেশ অবাক করা কাণ্ডের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন উমরান মালিক। ক্রিকেট দুনিয়ায় বেশ বিরল ঘটনার জন্ম হয়েছে উমরানের করা ওভারে। আইপিএলের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাঞ্জাব কিংস ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। প্রথম ইনিংসের শেষ ওভারের জন্যে সানরাইজার্সের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

আর শেষ ওভারে বিস্ময়ের সৃষ্টি! গুণে গুণে চারখানা উইকেটের পতন। যেখানে শেষ ওভারে ব্যাটারদের মানসিকতা থাকে যতবেশি রান সংগ্রহ করা যায়। আর সে ওভারেই চার উইকেটের পতন নিশ্চয়ই পরিকল্পনার বাইরের অঘটন। তবে তা পাঞ্জাবের জন্যে। তবে দিনটা নিশ্চয়ই মনে রাখবে আইপিএলের ভক্ত-সমর্থকেরা। উমরানও নিশ্চয়ই মনে রাখবেন।

১৯ তম ওভারের প্রথম বলে কোন প্রকার রান নিতে পারেনি পাঞ্জাবের ব্যাটাররা। দ্বিতীয় বলে গতির ঝড় উঠানো উমরানের স্লোয়ার। বলের গতি আন্দাজ করতে পারলেন না ওডিয়ান স্মিথ। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উমরানের হাতে। ব্যাস প্রথম উইকেটের পতন। দুই বলে কোন রান না দিয়েই উমরানের ঝুলিতে এক উইকেট। ঠিক পরের বলেই আবার গতির ঝলক। তবে এদফা মেলেনি উইকেটের দেখা।

এরপরের বল গিয়ে সজোরে আঘাত করে অফ স্ট্যাম্পে। আরও একটি উইকেট চলে যায় উমরানের পকেটে। ততক্ষণে নেই চার বল। একটি রানও নিতে পারেনি পাঞ্জাবের ব্যাটাররা। শেষের দুই বল, আর ব্যাটিং অর্ডারের লেজও ততক্ষণে বাইশ গজে। আবার উমরানের আঘাত স্ট্যাম্পে। হ্যাট্রিকের দ্বারপ্রান্তে উমরান। চাপের মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে রান নেওয়াটাই তখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায় পাঞ্জাব ব্যাটারদের জন্যে।

তখন কেবল একটি মাত্র বল বাকি। একটি রানও আসেনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শেষ ওভারে। তা কি আর মেনে নেওয়া যায়? তাই পাঞ্জাবের শেষ দুই ব্যাটার উমরানের বল কোন রকম কাভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়েই প্রান্ত বদলের জন্যে প্রাণপনে দৌড়। তবে আর্শদ্বীপ সিং কাটা পড়েন রান আউটের ফাঁদে। ব্যাস রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিলেন উমরান আর তাঁর সেই শেষ ওভার।

আইপিএলে বিশতম ওভারে কোন রান না দেওয়া চতুর্থ বোলার এখন উমরান। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে যেন আড়াল হতেই পারছেন না উমরান। অথচ তিনি ছিলেন একেবারে নিরবে নিভৃতে। কথিত আছে জম্মু-কাশ্মিরের কোন এক নেটে কিশোর উমরানকে বোলিং করতে দেখেন তীর্থ যাত্রায় যাওয়া ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকেরা। উমরানের বলের গতিতে মুগ্ধ হয়ে যান তাঁরা। তাঁদের সুপারিশেই পরবর্তীতে উমরানের ঠাই হয় জম্মু-কাশ্মির রাজ্য দলে সুযোগ পান উমরান।

আর এখন তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসের এক অংশ। কেননা শেষ ওভারে চার উইকেট নেওয়ার ঘটনা এই ক্ষুদ্র সংস্করণের ক্রিকেটে ঘটেছে কেবল মাত্র তিনবার। তৃতীয় বারের সাথে নিজের নামটি নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন উমরান রেকর্ড বইয়ে। স্বপ্ন যাত্রার শুরু কিংবা অনেকটা চলে এসেছেন উমরান। তবে এখানেই নিশ্চয়ই থেমে যেতে চাইবেন না উমরান। যেতে চাইবেন আরও বহুদূর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link