ইতালি বরাবর বিখ্যাত কিছু জিনিসের জন্য। পিসার হেলানো টাওয়ার, ভেনিসের জলমগ্ন রাস্তা, লিওনার্দোর মাল্টিপল ট্যালেন্ট এবং ফুটবলে ডিফেন্সিভ ছকের জন্য। ইতালিয় ফুটবলের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি ফুটবল দেখা যায়, তবে চিরকালের নিয়ম – আগে ডিফেন্স গোছাও, তারপর অ্যাটাকে যাও। এই কারণেই বোধহয় মার্সেলো বিয়েলসা কখনও ইতালিতে কোচিং করাতে আসেননি। যদি আসতেন, আর বলতেন আমার টিমে ব্যাক থাকবে তিন জন, সমগ্র ইতালিই বোধহয় ভয়ে কেঁপে উঠত!
যদিও, মার্সেলো বিয়েলসার অন্যতম গুরু একজন ইতালিয়ানই। আরিগো সাচ্চি। যাঁর থেকে তিনি শিখেছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন। ইতালিয় ফুটবলের এটাই ধরণ। তুল্যমূল্য অ্যাটাকিং ফুটবল খেলাটা ঠিক ইতালিয় ঘরানা সঙ্গে যায় না, কাজেই যুগে যুগে ইতালি পরপর দুর্দান্ত কিছু ডিফেন্ডারের জন্ম দিয়ে গেছে। ভাল কিছু রিফ্লেক্সের গোলকিপারের জন্ম দিয়েছে।
ডিফেন্স শক্ত করতে যে সমস্ত ডিফেন্ডারদের ইতালি তুলেছে, তাদের কেউ প্রচণ্ড শৈল্পিক, কেউ ধ্বংসাত্মক আবার কেউ সারাজীবন প্রচণ্ড ভাল পারফর্ম করেও বটগাছগুলির ছায়ার তলায় থেকে যান। প্রচার পান না সেরকম। লাইমলাইট যতটা আশা করেন, তার থেকে অনেকটাই কম পেয়েছেন। তেমনই একজনের নাম আলেসান্দ্রো নেস্তা। যিনি অর্জুনের সমকক্ষ হয়েও রয়ে গেলেন কর্ণের পরিচিতিতেই।
নেস্তার জন্ম রোমে। কিন্তু আজীবন খেলেছেন লাজিও অথবা মিলানে। চারশোর বেশি অ্যাপিয়ারেন্স, দেশের জার্সিতেও প্রায় একশোর কাছাকাছি ম্যাচ খেলার সংখ্যা। সেই বিচারে বসলে, ফাবিও কানাভারো বা পাওলো মালদিনি যে লাইমলাইটটা পেয়েছেন, নেস্তা পেলেন কি তা? এ প্রজন্মের অনেকেই তো নেস্তার নামও পর্যন্ত শুনেছে বলে মনে হয় না!
অথচ কী ট্যাক্টফুল ডিফেন্ডার ছিলেন! নেস্তার পজিশন ছিল সেন্ট্রাল ব্যাক। এসি মিলানে আনচেলোত্তি কোচ থাকাকালীন সেই চিরাচরিত ক্রিসমাস ট্রি ফর্মেশনে (৪-৩-২-১) খেলাতেন, তখন ওভারল্যাপ আক্রমণ হলে দুই সাইডব্যাক জানকুলভস্কি এবং কাফু উঠে যেতেন আক্রমণে। ডিফেন্সে ঠায় দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন নেস্তা-মালদিনি। জার্সি নম্বর ১৩, ৩। নেস্তা পরতেন ১৩। সত্যিই, আনলাকি কী আর সাধে বলে।
কত অবধারিত গোল যে বাঁচিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। রেকর্ড বুকের পাতা ওল্টাতে গেলে একটা জন্ম লেগে যাবে। নেস্তা-মালদিনির ডিফেন্সে ভর ক’রে এসেছে কোপা ইতালিয়া, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ এবং সর্বোপরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। আবার নেস্তা-কানাভারোর পায়ের উপর ভরসা করে ইতালি ২০০৬ তে পেয়েছে বিশ্বকাপ। খেয়াল করলে দেখা যাবে, দুটি জুটিতেই নেস্তার নামটা কমন। অথচ পাওলো মালদিনি, ফ্যাবিও কানাভারো ব্যালন ডি অর পেয়ে গেল, নেস্তার পাওয়া হল না। সেভাবে প্রচারেই কখনও এলেন না এই সৈন্য।
সৈন্যই। সেনাপতি কার্লোস আনচেলোত্তির জন্য প্রায় জান দিয়ে দেওয়ার মত পারফরমেন্স হত প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই। তেমন কোনও সৌন্দর্য নেই, অথচ ব্যাকলাইনে বল গেলেই আটকে যেত নেস্তার পায়ে। তুল্যমূল্যই ছিলেন, সমকক্ষই ছিলেন মালদিনি-কানাভারোর, তবে ঐ – সবাই তো আর অর্জুন হন না। কেউ কেউ কর্ণও হন।