গতবছর আকবর আলীদের যেই অনুর্ধ্ব-১৯ দলটা বিশ্বকাপ জিতলো সেই দলটার কয়েকজন ক্রিকেটার বিশ্বমানের হওয়ার যোগ্যতা রাখে এবং তারা পারফরম্যান্স দিয়েই প্রমাণ করছে, তারা তৈরী আছে। সবচেয়ে সুখবর হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই বিশ্বকাপজয়ী দলটাকে নিয়ে একটা দারুণ পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলছে।
প্রথমত বিশ্বকাপ জয় করে আসার পর বিসিবি এদের ছন্নছাড়া হতে দেয়নি। বরং, এদের পর্যাপ্ত বেতন দিয়ে একটা ছাতার নিচেই রেখেছে। এদের হাই পারফরম্যান্স বা এমার্জিং দলের কাঠামোতে রেখে আবাসিক অনুশীলনের ভেতর রাখা হয়েছে। তাঁরা পাচ্ছেন বিশেষায়িত কোচিং। ফলে এরা দল হিসেবে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে এবং ইনডুভিজুয়ালিও ক্রিকেটারদের ইমপ্রুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনার কারণে এক বছর ম্যাচ খেলানো সম্ভব না হলেও এখন আবার সেই যাত্রা শুরু হয়েছে। আয়ারল্যান্ড উলভস নামে একটি দল বাংলাদেশে এসেছে এই দলটার( বাংলাদেশ এমার্জিং) সাথে খেলতে।
পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের একটা বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও বাকি চারটাতেই বাংলাদেশ এমার্জিং দল জিতেছে। এখন বিশ্বমানের হওয়ার যোগ্যতা রাখেন যারা তাদের কথা একটু বলি।
- তৌহিদ হৃদয়
২০২৩ বিশ্বকাপ পরবর্তী বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইন আপের ভিত্তি হতে পারেন তিনি। আয়ারল্যান্ড এর বিপক্ষে ম্যাচ গুলোয় তিনি খুব সুন্দর ভাবে দুটি রোল প্লে করেছেন। দলের প্রয়োজন মত ব্যাট করে ইনিংস বিল্ড আপ করেছেন এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি ম্যাচ শেষ করে এসেছেন।
দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেন এমন ব্যাটসম্যান দেশে খুব বেশি আসেনা। আর তার হাতে যেই পরিমান শট আছে, তাতে যেকোনো বোলারকে ডিপ্রেশনে ফেলে দিতে পারেন।
তৌহিদ হৃদয় যুব স্তরের খুবই উল্লেখযোগ্য ব্যাটসম্যান। আকবর আলী, শামীম পাটোয়ারি ও মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে দারুন সব জুটি আছে তার।
- মাহমুদুল হাসান জয়
জয় সম্ভবত এই দলের সবচেয়ে প্রতিভাধর ব্যাটসম্যান। এই সিরিজে তাকে নিয়ে খুব আলোচনা না হলেও তিনিও সময়মত রান করেছেন। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে তিনি ১৩৫ বলে ১২৩ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। জয়ের হাতে শট কিছুটা কম থাকলেও জয় টেকনিক্যালি খুব শক্তিশালী। তাই শট নিয়ে কিছু কাজ করলে তিনিও কয়েক বছরের মধ্যে জাতীয় দলে চলে আসতে পারেন।
জয় ছিলেন যুব ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। ওই স্তরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫টি সেঞ্চুরি আছে তার।
- শামীম পাটোয়ারি
শামীমকে নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে গেছে। অবশ্য ঝড় তিনিই আগে উঠিয়েছেন ব্যাট হাতে। এক কথায় বললে বাংলাদেশে শামীম পাটোয়ারির মত ব্যাটসম্যান রোজ আসেনা। মাসেল পাওয়ার আছে এবং এই পাওয়ার কী করে ইউজ করতে হয় জানেন। ফলে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় শট খেলতে পারেন। এই সিরিজেও তিনি দ্রুত রান তুলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
শামীমের আরেকটা বড় ব্যাপার হলো, তিনি এই মুহুর্তে অবশ্যই দেশের সেরা ফিল্ডার। গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংয়ে তার চেয়ে ভালো ফিল্ডার আমরা এর আগে পেয়েছি কি না, সে নিয়েই তর্ক চলতে পারে।
এমন একজন ক্রিকেটারকেই আমরা ৬/৭ এ খেলানোর জন্য অনেক বছর ধরে খুঁজছিলাম। আমার মনে হয় জাতীয় দলের রেসে শামীমই সবচেয়ে এগিয়ে।
- শরিফুল ইসলাম
এই দলটার পেসার শরিফুল ইসলাম ইতিমধ্যে জাতীয় দলের রাডারে ঢুকে গেছেন। তিনি এখন জাতীয় দলের সাথে নিউজিল্যান্ড এ আছেন। যদিও এখনই খুব বেশি চাপ দেয়া উচিৎ না। তবে দলের সাথে রেখে শরিফুলকে আরেকটু পরিণত করা গেলে তিনি পেস বোলিং এট্যাকের বড় সম্পদ হতে পারেন।
শরিফুলের গড়নই ফাস্ট বোলার হয়ে ওঠার খুব উপযুক্ত। এটা তাকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
- অনারারি মেনশন: মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী
তিনি যুব বিশ্বকাপটা পুরোটা খেলতে পারেননি ইনজুরির জন্য। সেই ইনজুরি এখনও ভোগাচ্ছে তাকে। ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে ফিরলেও বোলিং ফিটনেসটা ফিরে পাননি। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটিং-বোলিং দুটোই করবেন বলে জানা গেছে।
মৃত্যুঞ্জয় সম্ভাবনা অনুযায়ী এগোতে পারলে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে পারেন। তার ভেতর সে সম্ভাবনা আছে।
এ ছাড়াও তানজিদ হাসান তামিম, রকিবুল হাসান বা আকবর আলীর নাম করা যেতো। আশা করা যায়, তারাও নিজেদের এর মধ্যে তৈরী করে ফেলবেন। সর্বপরি এই ১৯-২০ বছরের ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর আশা দেখাচ্ছেন। তবে এখনই তাড়াহুড়া করে জাতীয় দলে না এনে বিসিবি যদি এদের এভাবেই আরো ২-৩ বছর যত্ন নেয় তাহলে আমাদের আশা পূরণ হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।