ডুসেন এবার তবে হাসতে পারেন

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঘটনা। শারজায় ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা মধ্যকার ম্যাচটা জিতেছিল প্রোটিয়ারাই। আর ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন। তবে ৬০ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও সেদিন বিষণ্ন প্রস্থান হয়েছিল ডুসেনের।

কারণ ম্যাচ জিতেও রানরেটের মারপ্যাঁচে পড়ে সেমির দৌড় থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। রান রেটের হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে পিছিয়ে থাকায় ডুসেনের সব চেষ্টা বিফলে যায়। সুপার টুয়েলভের গ্রুপ ১ থেকে সেমিতে যায় ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া।

দলের এমন বিদায়ের পর ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে এসে ছলছলে চোখে ডুসেন বলছিলেন, ‘এই পুরস্কারের কোনো মূল্য নেই।’ প্রোটিয়া এ ব্যাটারের দর্শনটাই যেন এমন- সবার ঊর্ধ্বে দেশ, ব্যক্তিগত অর্জন গৌণ মাত্র। সে সময়ের ২ বছর বাদে এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ আবার যখন খেলছেন, এবার সেই হতাশাটা আর সঙ্গী হয়নি ডুসেনের সাথে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচ জিতলেন। ৭৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরাও হলেন। তবে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা- এ ম্যাচের আগেই নিশ্চিত হয়েছে প্রোটিয়ারদের সেমির টিকিট। সব পূর্ণতার মিশেলে এবার তবে হাসতেই পারেন ডুসেন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই এবারের বিশ্বকাপে শতক পেরোনো ইনিংস খেলা হয়ে গেছে ডুসেনের। আসরের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেকে রাঙিয়েছিলেন ১০৮ রানের ইনিংস খেলে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি পান এ প্রোটিয়া এ ব্যাটার। এ ছাড়া ২ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ টি ফিফটিও হাঁকিয়েছেন ডুসেন। যার একটি আসলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে।

আফগানিস্তানের দেওয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য সহজই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। তবে রান তাড়ায় এবারের বিশ্বকাপে খানিকটা খেই হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। তার উপর আফগান স্পিনশক্তি নিয়ে কিছুটা ভয় তো ছিলই। তবে সব ভয় কিংবা শঙ্কা জয় করে অনায়াসেই ম্যাচটা জিতে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে যাত্রায় শুরুটা ভাল করলেও মাঝপথে কিছুটা ছন্দই হারিয়ে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে মারক্রাম, ক্লাসেনের বিদায়েও দলের বিপদ ঘটতে দেননি ডুসেন। মার্কো ইয়ানসেনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া আরেক অলরাউন্ডার আন্দিলে ফিকোয়াওকে নিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেন ডুসেন। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৬২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটি গড়েন।

৯৫ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৬ রান করেন ডুসেন। এমনিতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চিরাচরিত রূপ ছেড়ে এদিন কিছাটা রয়েশয়েই খেলেছেন ডুসেন। তবে তাঁর সময়োপযোগী ইনিংসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ  আফ্রিকা।

দুই বছর চোখের জলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া ডুসেন এবার হাসতেই পারেন। কারণ তাঁর দল এখন রয়েছে ফাইনালে ওঠার দৌড়ে। আর দুটি ম্যাচের বাঁধা টপকালেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপ উঁচিয়ে ধরবে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ তকমা নিশ্চয়ই ঝেড়ে ফেলতে চাইবেন ডুসেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link