ম্যাচের শেষ মিনিট চলছে। দুই দল সমতায়, আক্রমণে একদল। শেষ মুহূর্তের গোলই পারে দলকে এগিয়ে নিতে। এক গোলই হয়ে যেতে পারে এই মৌসুমের ডিসাইডিং গোল। এমন সময় ডি-বক্সের ভেতর ডিফেন্ডিং দল ফেলে দিলো প্রতিপক্ষ দলের স্ট্রাইকারকে। রেফারি বাঁশি বাজালেন। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল রক্ষণে থাকা দল। কেনই বা হবে না? এই এক গোল তাদের ছিটকে দিতে পারে লিগজয়ের রাস্তা থেকে। দুই দলের ২২২ জন খেলোয়াড়-কোচ-স্টাফ সকলে যেন রেগে আগুন। বাইরে থেকে দর্শকদের চিৎকারে কান পাতা দায়!
বলুন তো উপরের ঘটনার সাথে আপনি কতটা পরিচিত? ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখতে দেখতে আমাদের চোখে নিয়মিত একটি ঘটনা এই শেষ মুহূর্তের ফাউল, পেনাল্টি। কিন্তু এইসময়ে দর্শক কিংবা খেলোয়াড়, মতামত যাই হোক না কেন, রেফারির সিদ্ধান্তের উপরেই ভরসা করে থাকতে হতো একসময় সকলকে। সময়ের সাথে বদলেছে ফুটবল। এখন আর কেউ রেফারির বাঁশিকে শেষ সিদ্ধান্ত মানে না। বরং তার উপরেও সিদ্ধান্তদাতা আছ। তার নাম ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি অথবা ভিএআর।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিয়মিত চলা এই প্রযুক্তির ব্যবহার এবার আসছে বাংলাদেশের লিগেও। ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক এড়াতে বাংলাদেশের ফুটবলে আসতে পারেআ ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি। আগামী প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমে এই প্রযুক্তি আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বৃহস্পতিবার ‘টামপাকো গ্রুপ’ এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এমন আশ্বাস দেন ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আগামী সিজন থেকেই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তি চালু করতে। এ বছর আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বলা বাহুল্য এই মৌসুমে রেফারিং নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে। ফেডারেশন কাপে এক্সেমন বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা উঠেছে বারবার। তেমনই প্রিমিয়ার লিগেও। আবাহনী-শেখ জামাল ম্যাচে লালকার্ড বিতর্ক, শেখ জামাল-বসুন্ধরা ম্যাচে গোল বিতর্ক জেঁকে ধরেছে এবারের প্রিমিয়ার লিগের রেফারিংকে। বিশেষ করে গত শনিবার ওমর জোবেকে করা তপু বর্মনের ফাউল নিয়ে কথা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। রিপ্লে থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে কোনো ফাউল হয়নি। কিন্তু গোল বাতিল করে দেওয়ায় গোলশূণ্য ড্র হয় সেই ম্যাচ। যাতে করে শীর্ষস্থানে থাকা বসুন্ধরাকে ছুঁতে ব্যর্থ হয় শেখ জামাল। শেখ জামাল ক্লাব থেকে অভিযোগ করেও খুব একটা লাভ হয়নি। কারণ মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত।
এই বিতর্ক এড়াতেই ভিএআর প্রযুক্তি আনা হবে বলে জানান সালাম মুর্শেদী। রেফারির ভুল সিদ্ধান্তকে খেলার অংশ বলেই দেখতে বলেছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় না রেফারিরা ইচ্ছা করে কোনো দলের পক্ষে বাজি বাজায়। তারা যে ভুলগুলো করে সেটা খেলারই অংশ। রেফারিদের এ ধরনের ভুল হয়েই থাকে।’
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ভিএআর প্রযুক্তি এনে আদৌ কি লাভের লাভ কিছু হবে? ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শুধু মাঠ নয়, তেমন আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রও লাগে। মাঠে আলাদাভাবে ক্যামেরা স্থাপন, আলাদা সাইডলাইনে স্ক্রিন বসানো, ভিএআর বসানোর জন্য আলাদা কন্ট্রোল রুম; এতোকিছু সম্ভব হবে প্রতিটি মাঠে বসানো? কয়েকদিন আগে জাতীত দলের কোচ জেমি ডে খেলা দেখতে গেলে তাকে বসানো হয়েছে চতুর্থ রেফারির জন্য থাকা আসনে। সেখান থেকে রাতারাতি বদলে ভিএআর প্রযুক্তি প্রতিটি মাঠে স্থাপন করতে পারলে বেশ বড়সর অগ্রগতি হবে আমাদের ফুটবলে।