দ্য কিউরিয়াস কেস অব বিরাগ আওয়াতে

রঞ্জি ট্রফির অভিষেকেই দেখা পেয়েছিলেন দুই ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি! নরি কন্ট্রাক্টরের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকেই দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি। স্বপ্নের মতোই অভিষেক হয়েছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। তাও কিনা ৩১ বছর বয়সে!

হ্যাঁ, ৩১ বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন বিরাগ আওয়াতে! মহারাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত হন তিনি। আর অভিষেকেই গড়েন দুর্দান্ত এক রেকর্ড। কিন্তু তবুও হারিয়ে গেছেন অল্পতেই! অভিষেকেই দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া বিরাগের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার ছিলো মাত্র সাত ম্যাচের!

বিরাগের অভিষেকের শেষ আট মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে অধিনায়ক কিংবা অভিষেকের গড় বয়সটা ২০ এর কাছাকাছি ছিলো! কিন্তু সেবার ২০১২ সালে তিনজন ক্রিকেটার ছিলেন ত্রিশের বেশি বয়সী। ওই মৌসুমে মহারাষ্ট্রের ক্রিকেটারদের গড় বয়স ছিলো ২৫ বছর। তাঁদের একজন ছিলেন বিরাগ আওয়াতে।

পুনেতে জন্ম নেওয়া বিরাগ মহারাষ্ট্রের হয়ে বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পরেও ছিলেন উপেক্ষিত। মহারাষ্ট্রের হয়ে খেলার সুযোগই পাচ্ছিলেন না বিরাগ। এরপর সাবেক মহারাষ্ট্র অধিনায়ক সুরেন্দ্র ভাভিকে মহারাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এতেই বদলে যায় বিরাগের ভাগ্য!

বিরাগকে খেলতে দেখে ভাভি বলেন, ‘আমরা যখন টুর্নামেন্টগুলো দেখতে গিয়েছিলাম সেখানে আওয়াতে তিন দিনের এবং একদিনের ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম করছিলো। ঘরোয়া ক্রিকেটে ১ হাজারের বেশি রান করে ফেলেছিলো আওয়াতে। তাই আমরা আমরা সিদ্ধান্ত নেই তাঁকে আমাদের অ্যাকাডেমি ম্যাচগুলোতে খেলানোর (যেখান থেকে খেলোয়াড় বাছাই করা হয়)।’

তখন একটা ফার্মের হিসাব বিভাগে কাজ করতেন আওয়াতে। ৬ বছরের এক মেয়েও ছিলো তাঁর। এরপর ট্রায়াল ম্যাচগুলোতে সুযোগ পেয়েই করলেন দুর্দান্ত পারফরম। বিরাগ বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম এটাই আমার সুযোগ। আমি দুইটা সেঞ্চুরি আর এক ফিফটি করলাম। আমি নিজেও মানতাম আমি একটা সুযোগ প্রাপ্য। এরপর যখন সুযোগ পেলাম নিজের সেরাটা দিয়ে তাদের দৃষ্টি কাড়লাম।’

এরপর রঞ্জি ট্রফির অভিষেকেই ৩২৭ বলে ১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন আওয়াত। পরের ইনিংসেই খেলেন ১১২ রানের আরেকটি অসাধারণ ইনিংস। অভিষেকেই দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ভার‍তের হয়ে গড়েন অনন্য এক রেকর্ড। কিন্তু এরপরই তিনি হারিয়ে গেছেন ব্যর্থতার সাগরে। পরের ম্যাচে উড়িষ্যার বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেন ২৫ ও ১ রান। এরপর হারিয়ানার বিপক্ষে ৩৮ এবং দিল্লীর বিপক্ষে ১০ ও ৩ করার পরই বাদ পড়েন দল থেকে।

আসলে মহারাষ্ট্রের নির্বাচকরা বেশ ধৈর্য্য এখানেই থেমে যায়। এর সাথে মাসল টিয়ারে ছিটকে যান আট মাসের জন্য। পরের দুই মৌসুমে ১৫ জনের দলে আর তাঁর জায়গা হয়নি।

মাত্র ৪ ম্যাচেই যেনো থমকে যাওয়ার পথে আওয়াতের ক্যারিয়ার। এরপর তিন বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আর সুযোগ পাননি তিনি। প্রায় তিন বছর পর ২০১৫ সালে ত্রিপুরার হয়ে আবারও খেলার সুযোগ পান আওয়াতে!

প্রথম ম্যাচে ঝাড়খণ্ডের বিপক্ষে ৩১ ও ২১ রানের পর দ্বিতীয় ম্যাচে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেলেন ৩ ও ৩৪ রানের ইনিংস। এরপর সারভিসের বিপক্ষে ১৪ ও ৭ রানের ইনিংসের পরই বাদ পড়েন দল থেকে। আওয়াতের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ইতিটা এখানেই। অভিষেকে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া আওয়াতের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার সীমাবদ্ধ ছিলো মাত্র ৭ ম্যাচে!

আওয়াতে হয়তো উড়তে পারেননি। তবে, তিনিই এখন অনেক তরুণকে আশা দিয়ে যাচ্ছেন। পুনেতে তিনি একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি চান। এখানে আসা প্রতিটা কিশোরের স্বপ্ন একটাই – তাঁদের ক্যারিয়ারটা যেন তাঁদের গুরুর মত না হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link