২০০৬ রঞ্জি ট্রফি। কর্ণাটকের বিপক্ষে ম্যাচের তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় দিল্লির ব্যাটার পুনিত বিষ্ট ড্রেসিং রুমে ফিরেই দেখলেন এক কোণে আনমনা হয়ে বসে আছেন ১৭ বছর বয়সী বিরাট কোহলি। বিষ্টের বয়সও তখন ১৯ বছর।
ওই সময় বিরাটের চোখমুখে যেনো বলে দিতো তিনিই ভারতের ভবিষ্যত অধিনায়ক। ঘন্টা কয়েক আগেই বাবা প্রেমকে হারিয়েছেন বিরাট। ড্রেসিং রুমে ফিরেই জানতে পারেন এই খবর। সেদিন ব্যাট হাতে নট আউট ছিলেন বিশত ও বিরাট। বাড়ি ফেরার বদলে ম্যাচ বাঁচাতে দলের সাথেই ছিলেন বিরাট। সেই স্মৃতি মনে করে বিষ্ট বলেন, ‘বাবা যখন দুনিয়া ছেড়ে গেছেন আর বিরাট তখন পরের দিন ব্যাটিংয়ে নামার চিন্তা করছিল!’
আসছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে সিরিজে ক্যারিয়ারের শততম টেস্টের মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বিরাটের ১০০তম টেস্টকে সামনে রেখে পুরোনো স্মৃতি আরো একবার মনে করলেন বিশত। ২০০৬ এর রঞ্জি ট্রফির সেদিনের কথা যেনো কখনো ভুলতে পারবেন না দিল্লীর সাবেক এই উইকেটরক্ষক।
বিষ্ট বলেন, ‘নিজের বাবাকে শেষবার দেখতে যেতে পারেনি বিরাট! কারণ সে চায়নি তাঁর দল ম্যাচ থেকে ছিটকে যাক। আমরা ওই ম্যাচে খুব ভালো অবস্থায় ছিলাম না। সিনিয়র ক্রিকেটার চেতন চৌহান অধিনায়ক মিঠুন মানহাসও বিরাটকে বলছিলেন বাড়ি যাও তুমি! যতটুক মনে পারে চেতন স্যার ওই মৌসুমে আমাদের কোচ ছিলেন। চেতন স্যার ও মিঠুন ভাই দু’জনেই বিরাটকে বলেছিলেন বাসায় যেতে। সত্যি বলতে কেউ অন্য কিছু ভাবেনি। সবার মধ্যেই ছিলো বিরাটের বাড়ি ফিরে পরিবারের পাশে থাকা উচিত। কিন্তু বিরাট অন্য সিদ্ধান্ত নিল!’
৯৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে পুনিত বিষ্ট প্রায় ৪৩৭৮ করেছেন। তবে বিরাটের সাথে ওই ১৫২ রানের জুটি যেনো আজীবন মনে রাখবেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ওই ইনিংসে বিশত ১৫৬ ও বিরাট খেলেন ৯০ রানের অসাধারণ ইনিংস।
বিষ্ট বলেন, ‘আমার মনে আছে, ওই কয়েক ঘণ্টা ওর মন খারাপ ছিল। এরপর পুরো মনোযোগটাই খেলার প্রতি ছিল। সে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেছে, তাঁর সিগনেচার কভার ড্রাইভ।আমাদের মাঝে খুব কম কথা হয়েছিলো সে শুধু এসে বলতো অনেক বড় ইনিংস খেলতে হবে, আউট হওয়া যাবে না। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। মাঝে মধ্যে মনে হতো তাঁর মাথায় হাত রেখে কিছু কথা বলে সান্ত্বনা দেই। পরে মনে হতো না আমাদেরকে এই কাজটা আমাদের শেষ করতে হবে এবং এটাতেই মনোযোগ দিতে হবে।’
বিরাট জাতীয় দলে দ্রুত সুযোগ পাচ্ছে তা যেনো অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বিরাটের রঞ্জি দলের সতীর্থরা। বিষ্ট জানান বিরাটের মধ্যে আগ্রাসী সেই ভাবটা এখনো আছে। এটা বেশ ভালো ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘আমরা রঞ্জি ট্রফি খেলার আগ থেকেই একজন আরেকজনকে জানতাম। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর। আমিও তখন দিল্লির ক্লাবে খেলতাম। সবাই তার ব্যাপারে কথা বলতো। সবাই জানতো তাঁর যে প্রতিভা খুব বেশি সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে থাকার প্রয়োজন হবে না। সে সবসময়ই মাঠের ক্রিকেটে আগ্রাসী ছিলো, এটা তাঁর মধ্যে রাতারাতি আসেনি। এটা দেখতে ভালো লাগে ১৭ বছর বয়সী বিরাট ৩৩ বছর বয়সেও একই আছে। তাঁর পারসনালিটি পরিবর্তন হয়নি।’
ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলে উঠে আসার পর যেনো আরো কঠোর পরিশ্রম করেছেন বিরাট। ফিটনেসের ব্যাপারে সবসময়ই ছিলেন মনোযোগী। বিষ্ট জানালেন এখনো বিরাটের সাথে দেখা হলে আন্তরিকতা দেখায় ভারতের এই তারকা ব্যাটার। তিনি বলেন, ‘যখনি কোনো জায়গায় দেখা হয় কথা হয় খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলে। ২০১২ এর পর সে যেভাবে বডি ফিট রেখেছে, ডায়েট করেছে, ফিটনেস এবং নিয়ম মেনে চলেছে এটা সবার জন্যই অনুপ্রেরণামূলক।
এছাড়া ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটার দিল্লিতে বিরাটের সাবেক সতীর্থ শ্রীভাস গোস্বামী বলেন, ‘সে একটানা বাউন্ডারি হাঁকাতে পারতো এবং ক্লান্ত হতো না কখনো। সে ক্যারিয়ারের একদম সঠিক সময়ে সুযোগ পেয়েছে আর সেটা কাযে লাগিয়ে সফল হয়েছে। এই সবকিছুই সময়ের সঠিক ব্যবহারের ফলে হয়েছে।’