ওয়াস্তি, প্রশস্তি কিংবা অস্বস্তি

মাত্র ১ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হতে পারেননি ওয়াস্তি। ছয় টেস্ট আর ১৫ ওয়ানডেতেই থামে ওয়াস্তির ক্যারিয়ার। অবশ্য ক্রিকেট ছাড়ার পর ২০১৪ সালে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৪ সালে ভাইয়ের উপর আক্রমণ করে জেলে যান ওয়াস্তি। অবশ্য কয়েকদিন বাদেই জামিনে ছাড়া পান সাবেক এই পাকিস্তানি ওপেনার। মাঠের কিংবদন্তি হওয়ার কথা যার, সে কি না জেলে গিয়ে খবরের পাতায় শিরোনাম হলেন।

মার্চ, ১৯৯৯। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি পাকিস্তান। ওই টেস্টে অভিষিক্ত হন ওয়াজাতুল্লাহ ওয়াস্তি। ওপেনিংয়ে সাঈদ আনোয়ারের সাথে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন ওয়াস্তি। ওয়াস্তির ১৩৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ৩৯৮ রান করে পাকিস্তান।

এরপর শ্রীলঙ্কার ৩২৮ রানের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে আরো এক সেঞ্চুরি করে ওয়াস্তি নিজের নাম তোলেন রেকর্ড বইয়ে। টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির পথে জাভেদ মিঁয়াদাদ, ইয়াসির হামিদ, ইনজামাম উল হক ও মোহাম্মদ ইউসুফের পর পঞ্চম পাকিস্তানি ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন ওয়াস্তি। তাও নিজের মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই এই রেকর্ড গড়েন ওয়াস্তি!

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির পরেও ওয়াস্তির টেস্ট ক্যারিয়ার স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৬ ম্যাচ! পরের চার ম্যাচেই যে ওয়াস্তি ব্যাট হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ।

১৯৭৪ সালে ১১ নভেম্বর পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াজাতুল্লাহ ওয়াস্তি। বর্তমান সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন বলে খেলতে অনেক ব্যাটারই হিমসিম খায়। নতুন বলের স্যুইং, বাউন্স সামলাতে অনেকেই বিপাকে পড়েন। কিন্তু নব্বই দশকের একদম শেষ দিকে নতুন বলে বেশ ভাল খেলতে পারতেন ওয়াস্তি। আর যার কারণেই পাকিস্তান ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন নতুন সম্ভাবনা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স পাকিস্তান ক্রিকেটে জাগিয়েছিল নতুন সম্ভাবনা। ওপেনিং সংকটটা হয়তো ওয়াস্তির হাত ধরেই কাটবে – টানা দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির পর এমন প্রত্যাশাই ছিল পাকিস্তানিদের। কিন্তু আশায় ছাই ঢেলে দিয়ে সম্ভাবনাকে আর বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি এই ডান হাতি ওপেনার।

১৯৯৯ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পর একই বছর ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন ওয়াস্তি। ওই বছর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে জায়গা পান তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে সাদামাটা পারফর্ম করলেও সেমিফাইনালে সাঈদ আনোয়ারের সাথে ১৯৪ রানের দুর্দান্ত জুটির পথে ৮৪ রান করে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটের জয় এনে দেন ওয়াস্তি।

৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৫ ম্যাচের এই একটি ইনিংস ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনি। ১৫ ওয়ানডেতে ২৩ গড়ে করেছেন মাত্র ৩৪৯ রান! ৮৪ রানের সেই ইনিংস বাদ দিলে ১৪ ইনিংসে ১৮ গড়ে মাত্র ২৬৪ রান করেন এই ওপেনার।

মাত্র ১ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হতে পারেননি ওয়াস্তি। ছয় টেস্ট আর ১৫ ওয়ানডেতেই থামে ওয়াস্তির ক্যারিয়ার। অবশ্য ক্রিকেট ছাড়ার পর ২০১৪ সালে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৪ সালে ভাইয়ের উপর আক্রমণ করে জেলে যান ওয়াস্তি। অবশ্য কয়েকদিন বাদেই জামিনে ছাড়া পান সাবেক এই পাকিস্তানি ওপেনার। মাঠের কিংবদন্তি হওয়ার কথা যার, সে কি না জেলে গিয়ে খবরের পাতায় শিরোনাম হলেন।

জাতীয় দলে সেরাটা দিতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন দারুন ফর্মে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ ওয়াস্তি ঘরোয়া ক্রিকেটে করেছেন ১১ হাজারের বেশি রান!

বলতে গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেই ৮৪ রানের ইনিংস আর টেস্টে অভিষেকের পর দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি ছাড়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি ছিলেন স্রেফ হতাশা! ঘরোয়া ক্রিকেটের এই তারকা জাতীয় দলে এসে নিজের সামর্থ্যের সিঁকিভাগ দিতে পারলেও সিংহভাগই ছিল ব্যর্থতার আড়ালে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...