আনাড়ি অফস্পিনার থেকে দক্ষ টেস্ট অলরাউন্ডার, ওয়াশিংটন সুন্দরকে যেন নিজের ছাঁচে বেশ যত্ন করে গড়েই তুলেছেন কোচ পারস মামব্রে। সালটা ২০১৬, জানুয়ারির হাড়কাঁপানো শীতে ভারত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে যোগ দিলেন সুন্দর। ভেবেছিলেন টপ-অর্ডার ব্যাটার হিসাবে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের ছাপ রাখবেন। তবে হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় আর বোলিং কোচ মামব্রের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। জহুরির চোখ স্বর্ণ চিনতে ভুল করে নি, নেটে তার অফস্পিন দেখে মনে ধরে দু’জনেরই।
সেই সময়ের এক সাক্ষাৎকারে মামব্রে বলেছিলেন, ‘রাহুল এবং আমি বুঝতে পারি তার স্পিন বোলিংয়ের দক্ষতা এখনো কাজে লাগানো হয়নি। এখন ওর চিন্তাভাবনা পাল্টানো কঠিন। তবে সুন্দর চাইলে তার রোল মডেল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মত বিশ্বসেরা স্পিনারদের একজন হতে পারবে।’
এরপরে বেলা গড়িয়ে কেটে গেছে অনেক বছর। চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে প্রথম টেস্টে অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজাকে টপকে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন ওয়াশিংটন। সম্প্রতিই আরেক সাক্ষাৎকারে মামব্রে বলেন, ‘এখনকার ওয়াশিংটনের মধ্যে কোন লোকদেখানো ভাব নেই। সে সবার সাথেই খুব সহজে মিশে যেতে পারে। তবে ২০১৬ সালের দিকে ওয়াশিংটন বেশ লাজুক ছিল। তবে সে সর্বদাই একজন ভালো শ্রোতা ছিল। এখন সে বেশ পরিপক্ক, তাকে কোন উপদেশ দিলে সে কখনোই অভিযোগ করেনা, মন দিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।’
ফলাফলও পেয়েছিলেন তিনি দ্রুতই। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ শেষেই ভারত এ দল ও আইপিএলের দুয়ার খুলে যায় তার জন্য। যে কোন তরুণের জন্যই তা স্বপ্নের মত অগ্রগতি। তাকে ‘স্মুথ অপারেটর’ হিসেবেও আখ্যা দেন মামব্রে। মামব্রে আরও বলেন, ‘তাকে যা বলা হয় তা নিয়ে ভেবে, নিজের জন্য যেটা ভালো তা বেছে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি। প্রতি মৌসুমে তার অফস্পিনের অগ্রগতি দেখেই তা বোঝা যায়।’
পার্থ টেস্টে অশ্বিন, জাদেজার বদলে তার সুযোগ পাওয়া নিয়ে যদিও আলোচনা-সমালোচনা আছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার দুই পেস স্বর্গের পিচেও ভারতের টেস্ট জয়ী দলের অংশ ছিলেন তিনি। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও বরাবরই তার উপর ভরশা রাখছেন। এমনকি এমন প্রতিভা ধ্বংসের পিছে দায়ী আইপিএলের ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ রুলসেরও কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
মামব্রে বলেন, ‘আমরা এই বছরের শুরুতেই ইংল্যান্ড সিরিজের সময় অশ্বিন-জাদেজা পরবর্তী যুগের জন্য বিকল্প খুঁজছিলাম। সুন্দর সেই চাহিদা পূর্ণ করেছে। রোহিতেরও তাকে পছন্দ, কারন ম্যাচ না খেলালে অস্থির হওয়ার মত খেলোয়াড় না সুন্দর। টিম যা চাইবে, সে তাই করবে। কারন দলের হয়ে অবদান রাখতে পেরেই সে বেশ গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন গতানুগতিক অফস্পিনার না, সে চাইলেও অশ্বিনের মত বলকে বেশি টার্ন করাতে পারবে না। সে কখনো অশ্বিন হতেও চায় না। সেসবসময় কঠোর পরিশ্রম করেই যাচ্ছে, বোলিংয়ে ভ্যারিয়েশন আনার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন এঙ্গেল পরীক্ষা করছে। ব্যাটে সাত বা আট নম্বরেও সে বেশ কার্যকারী।’
সাত টেস্টে ৪৮.৩৭ গড়ে ৩৮৭ রান,আছে ২৪ উইকেটও। সম্প্রতিই ক্যারিয়ার সেরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানে সাত উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাটটাও বেশ ভালোই চালান তিনি, ইংল্যান্ড বিপক্ষে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংসটা নজর কেড়েছিল অনেকেরই। যদিও অশ্বিন, জাদেজা এখনো দলের অপরিহার্য স্মম্ভ, তবে পিছিয়ে নেই সুন্দরও। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে ভারতের স্পিন বিভাগের পরবর্তী ত্রাতা ওয়াশিংটন সুন্দরই হতে যাচ্ছেন।