ফুটবল ফেরত বিচিত্র পেশাজীবী

শিল্পীর তুলির আঁচড়ে তৈরি হওয়া শিল্পকর্ম কিংবা জঞ্জালে ভরা পরিত্যক্ত কোন এক বস্তু। দুটো ক্ষেত্রেই ফুটবলটাকে টেনে নিয়ে আসা যায়। লিওনেল মেসির চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং কিংবা পেপের অহেতুক বাজে ট্যাকেল এসব কিছু নিয়েই তো ফুটবল। স্বপ্নের এক যাত্রা। সবুজ গালিচার মধ্যখানে ফুটবলীয় শৈলী প্রদর্শন, তার চারপাশে এক ঝাক পাগলাটে দর্শক। কি অসাধারণ সেই মুহূর্ত! কি দারুণ এক অনুভূতি!

কিন্তু এই অনুভূতি, এই মুহূর্ত দীর্ঘস্থায়ী নয়। পৃথিবী নামক এই গোলকের ঘূর্ণনের সাথে পরিবর্তিত হয় অনেক কিছু। সেই পরিবর্তনের বিপরীতে আজ অবধি কেউ যেতে পারেনি। ভবিষ্যতের চিন্তা আপাতত নাই বা করা গেল। কিন্তু এই যে, পরিবর্তনের স্রোতে সাথে ভেসে ফুটবল মাঠ ছাড়া খেলোয়াড়দের গতিপথ ঠিক কোন মুখি হয়? হয় ম্যানেজার, কোচ কিংবা ফুটবল সংগঠক। ব্যতিক্রমী কেউ থাকবে না তা কি করে হয় বলুন। এমন ব্যতিক্রমীদের নিয়েই আলোচনা।

  • লিঁও ম্যাকেঞ্জি ও কার্টিস উডহাউস: বক্সার

কার্টিস উডহাউস ও লিঁও ম্যাকেঞ্জি দুইজনই যুক্ত ছিলেন ইংলিশ ফুটবলের সাথে। উডহাউস খেলেছিলেন শেফিল্ড ইউনাইটেড ও বার্মিংহাম সিটির মতো দলে। অন্যদিকে, ম্যাকেঞ্জি ছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেস যুব অ্যাকাডেমির সদস্য। ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে তাঁরা দুইজনই বক্সিং-কে বেছে নিয়েছিলেন নিজেদের পরবর্তী পেশা হিসেবে।

বক্সিং ক্যারিয়ারে দুই হারের বিপরীতে আট জয় তুলে নিয়েছিলেন ম্যাকেঞ্জি। উডহাউসের জয়ের পাল্লা ভারি। তিনি ২৪টি জিতেছেন, হেরেছেন সাতটি।

  • টিম উইজি: রেসলার

জার্মান ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলোয়াড় টিম উইজির ফুটবলীয় ক্যারিয়ারের সময়কাল ১৫ বছর। এরপর তিনি জিম করলেন। বাড়লো শরীরের মাংসপেশি। চিন্তা করলেন কি করবেন এই অবসর সময়ে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন যুক্ত হবেন রেসলিংয়ের সাথে।

২০১৬ সালে বার্লিনে হওয়া ডব্লিউডব্লিউইয়ের এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে উইজি পা রাখেন রেসলিং দুনিয়ায়। তবে সেখানে এখন অবধি খুব একটা স্থায়ী হতে পারেননি তিনি।

  • আরিয়েন ডি জিউ: ফরেনসিক ডিটেকটিভ

ডাচ ফুটবলার আরজান ডি জিউ নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলার সুযোগ না পেলেও ক্লাব পর্যায়ে তিনি ছিলেন নিয়মিত। ফুটবল ক্যারিয়ারের একটা বড় সময় তিনি কাটিয়েছেন ইংল্যান্ডে। সেখানকার ক্লাব উইগান অ্যাথলেটিকের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।

ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে প্রত্যাশা ছিল ডি জিউ ফিরবেন ফুটবল মাঠে অন্যকোন দায়িত্ব নিয়ে। কিন্তু না তিনি বেছে নিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পেশা। মেডিকেল ডিগ্রি ছিল তাঁর। সেই ডিগ্রি কাজে লাগিয়ে বনে গেলেন ফরেনসিক ডিটেকটিভ। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরের উত্তর দিকে নিজের নতুন পেশায় নিমজ্জিত রয়েছেন আরজান ডি জিউ।

  • রয়স্টন ড্রেন্থ: র‌্যাপার

নেদারল্যান্ডসকে উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে অবদান রেখেছিলেন রয়স্টন ড্রেন্থ। এতটা দৃষ্টিনন্দন পারফর্ম করেছিলেন তিনি যে দ্রুতই স্প্যানিশ জায়েন্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তাকে দলে ভেড়ায়। তবে প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি চলে যান ইংল্যান্ডে।

প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব এভারটনে কাটান কিছুদিন তারপর রাশিয়া, তুরস্ক হয়ে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেন ড্রেন্থ। এরপর ফুটবল থেকে সম্পূর্ণ দূরে সড়ে গিয়ে নতুন এক জগতে পদার্পণ করেন ড্রেন্থ। সংগীত জগতে প্রবেশ করেন র‍্যাপ দিয়ে। এখন পর্যন্ত সেই ইন্ড্রাস্টিতেই থিতু আছেন ড্রেন্থ।

  • ড্যানিয়েল অ্যাগার: ট্যাটু আর্টিস্ট

ফুটবলাদের ট্যাটু করার প্রবণতা নিশ্চয়ই কারো চোখ এড়ায় না। বাহারি সব উল্কির দেখা মেলে ইউরোপ থেকে শুরু করে ল্যাতিন আমেরিকান ফুটবলারদের সমগ্র শরীরজুড়ে। তবে খোদ একজন ফুটবলারের একজন উল্কিশিল্পী বনে যাওয়ার নজির  খুব একটা নেই।

সেদিক থেকে ব্যতিক্রম ডেনমার্কের সাবেক ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল অ্যাগার। ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে থাকাকালীন সময়েই পেশাদার ট্যাটু আর্টিস্ট এর স্বীকৃতি ছিল অ্যাগারের। ফুটবল কে বিদায় বলে তাই পুরোদস্তুর ট্যাটু আর্টিস্ট এখন ড্যানিয়েল অ্যাগার।

  • ফ্যাবিও বার্থেজ: মটোরেসার

সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী গোলরক্ষক ফ্যাবিও বার্থেজ ফ্রান্সের প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তিনি ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্শেই, মনোকা এবং ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলেছেন দীর্ঘকাল। ফুটবল পরবর্তী জীবনে বার্থেজ বেছে নেন মোটোরেসিং-কে।

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম মোটরকার রেস ‘লে ম্যান্স’ নামক প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকবার অংশগ্রহণ করেছেন ৷ এই রেসটি চলে একটানা ২৪ ঘন্টা। এখন পর্যন্ত ২২ জন চালকের মৃত্যু ঘটেছে এই রেস চলাকালীন সময়ে।

  • ভিনি জোন্স: অভিনেতা

১৯৮৮ সালে তিনি এফএ কাপ জেতেন। পেশাদার ক্যারিয়ারে এই মিডফিল্ডার লিডস, চেলসি কিংবা কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মত ক্লাবে খেলেছেন। ওয়েলস জাতীয় দলের খেলেছেন নয়টি ম্যাচ। যদিও, তিনি পরবর্তীতে অভিনেতা হিসেবে আরো বেশি সাফল্য পান। হলিউড এই অভিনেতা টেলিভিশনের পর্দায়ও কাজ করেন নিয়মিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link