দীর্ঘদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করা ফুটবলের রাজা পেলের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার খবরটা খুব বেশি আকস্মিক না হলেও স্তব্ধ করে দিয়েছে পুরো ফুটবল বিশ্বকে। ৮২ বছর বয়সে নিজের রাজত্ব ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। নিজের ক্যারিয়ারে পায়ের জাদুতে পুরো বিশ্বকে মোহিত করে রাখা পেলের ছিলেন বিংশ শতাব্দীরই অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব।
‘ব্রাজিলের জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া পেলে তাঁর ক্যারিয়ার চলাকালীন ছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার। তবে খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় উপার্জনকৃত অর্থের তুলনায় অবসরের পরেই বেশি আয় করেছেন পেলে।
পেলে নিজেও বলেছেন অবসরের পরের জীবনের উপার্জন নিয়ে, ‘বর্তমান খেলোয়াড়দের মত আমি ফুটবল খেলে বড়লোক হইনি। আমি মূলত ক্যারিয়ার শেষে বিজ্ঞাপন থেকে টাকা কামিয়েছি। কিন্তু আমি কখনো ধর্ম, তামাক,রাজনীতি বা এলকোহল এর সাথে জড়িত কিছু থেকে টাকা উপার্জন করিনি।’
সেলিব্রিটি নেট ওর্থের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত্যুর সময় পেলের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার। আশির দশকে ফুটবলকে বিদায় বললেও সে সময়ই সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেন পেলে।
ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকা অবস্থায়, ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব গুলো থেকে প্রস্তাব আসলেও ‘ব্রাজিলের জাতীয় সম্পদ’ পেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের আগে ব্রাজিলের বাইরে খেলেননি কোনো দেশের ক্লাব ফুটবলে।
১৮ বছর সান্তোসে কাটিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের শেষে নিউইয়র্কের কসমস ক্লাবের হয়ে খেলেন পেলে। সে ক্লাবে বার্ষিক ২.৮ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক পেতেন পেলে।
এছাড়াও একবিংশ শতাব্দিতেও থেমে থাকেনি পেলের বিজ্ঞাপন মূল্য। ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু ২০১৫ সালেই ১৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেন পেলে। যা অবসরপ্রাপ্ত সব খেলোয়াড়দের মধ্যে দশম সর্বোচ্চ।
প্রায় পাঁচ দশক আগে ফুটবলকে বিদায় জানানো পেলে অবসরের পরেও সারা বিশ্বে সবচেয়ে সম্মানীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলন। ফুটবলের বৈশ্বিক শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন পেলে। অবসরের পর ব্রাজিলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষজনের ভাগ্য উন্নয়নেও কাজ করেন পেলে।
সত্তর বা আশির দশকে বিজ্ঞাপন বাজারে রীতিমতো রাজত্ব করেছেন পেলে। ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল শুরুর আগে রেফারিকে থামিয়ে পেলের জুতা ঠিক করাটা আইকনিক দৃশ্য হয়ে আছে এখনো। পেলে জুতা ঠিক করার সময় জুম করা দৃশ্যে দেখা গেলো পেলের পরিহিত জুতাটি পুমা ব্র্যান্ডের। সেদিন শুধু জুতা বাঁধার জন্য আগেই পেলেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলার দিয়ে রেখেছিল পুমা ব্র্যান্ড।
২০১৫ সালের ফোর্বসের আরো একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫-৭৭ সময়কালে পেলে যা আয় করতেন তা এখন দেড় কোটি ডলারের সমান। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে ব্রাজিল সরকার থেকে ৫৬৭ ডলার করে পেনশন পেতেন পেলে।