তখন ১৯৯৩ সাল। আগের ম্যাচটা ছিল তাঁর শততম টেস্ট। কিন্তু ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখার মত কিছু করতে পারেননি গ্রাহাম গুচ। দুই ইনিংসে করলেন ১৭ ও ১৮। ভারতের স্পিন ত্রয়ী অনিল কুম্বলে, ভেংকটপতি রাজু আর রাজেশ চৌহান মিলে ইংল্যান্ডের ২০ এর মধ্যে ১৭ উইকেট নিলেন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ১৯৭ বলে ১৮২ রানের এক ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ড হেরে যায় ৮ রানে।
চেন্নাইতে পরের টেস্ট, সিরিজের দ্বিতীয়। টেস্টের আগের রাতে টিম হোটেলের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গিয়ে গুচ খেলেন চিংড়ির তরকারি। এমনিতেই নিয়মিত ভারত সফর করতে করতে চিংড়ি খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের। আর গ্রাহাম গুচ ছিলেন বিরাট ভোজনরসিক।
সকালে উঠেই কেমন যেন খারাপ লাগছিল ইংল্যান্ড অধিনায়ক গুচের। শীঘ্রই ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব আর মাথা ঘোরানো শুরু হল। বুঝতে পারলেন এই ম্যাচ আর খেলা হবে না। অ্যালেক স্টুয়ার্টকে বুঝিয়ে দিলেন অধিনায়কত্ব। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক স্টুয়ার্ট ছিলেন গুচের ওপেটিং পার্টনার।
হোটেল রুমের বিছানায় তিনদিন বিশ্রামের পর অবশেষে সুস্থ হন গুচ। হোটেলে অবশ্য তিনি একা ছিলেন না। অধিনায়ককে সঙ্গ দিতে ছিলেন রবিন স্মিথ ও মাইক গ্যাটিং। এই দু’জন আবার কোন এক রেস্টুরেন্টে মুরগি খেয়ে পেটের পীড়া বাঁধিয়েছিলেন। মানে, আক্ষরিক অর্থেই একাদশ গড়া কঠিন ছিল ইংল্যান্ডের জন্য।
গুচের এই কাহিনির পর চিংড়ি একেবারেই নিষিদ্ধ করে দেয় ম্যানেজমেন্ট। পুরো সফরেই এরপর থেকে শিম, কর্নড বিফ আর নান রুটি ছাড়া কিছুই খায়নি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।
গুচকে ছাড়া সুবিধা করে উঠতে পারল না ইংল্যান্ড। ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা পায় স্টুয়ার্ট বাহিনী।
পরের টেস্টে ফিরেও সুবিধা করতে পারেননি গুচ, করেছিলেন ৪ ও ৮। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের তখন ভয়াবহ দু:সময়।
অথচ, তিন বছর আগের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। ১৯৯০ তে যখন ভারত ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল তখন গুচের ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা। সে সিরিজেই লর্ডস টেস্টে করেন এক টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড (৩৩৩ ও ১২৩)। তিন ম্যাচের সিরিজে করেছিলেন রেকর্ড সংখ্যক ৭৫২ রান।
১৯৫৩ সালে এসেক্সে জন্ম নেন ইংল্যান্ডের এই সাবেক অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করা হয় তাঁকে। পরিসংখ্যানও তেমনই রায় দেয়। গুচ ১১৮ টেস্টে করেছেন ৮৯০০ রান।