আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন তীব্র প্রতিযোগীতার জায়গা। আর সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগীতা হয় আসলে খেলাটির আদি ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটে। সাদা বলের তুলনায় লাল বলের এই ক্রিকেটে একজন ব্যাটসম্যানকে ঘাম ঝরাতে হয় সবচাইতে বেশি।
এমন অনেক খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা সাদা বলে ভীষণ পারদর্শী কিন্তু লাল বলে হয়ত একেবারেই আনাড়ি। আবার, কঠিন এই ফরম্যাটেই অনেকে শুরু থেকেই দেখিয়েছে আশার বাতিঘর। তবে কিছু কিছু ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এই বাতিঘর নিভেও গেছে, যারা কিনা শুরু পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি।
সেরকম পাঁচ ক্রিকেটারের গল্প বলব আজ।
- মুরালি বিজয় (ভারত)
চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল আর তামিলনাড়ুর হয়ে রঞ্জি খেলাটাই মুরালি বিজয়কে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। দ্রুতই ডাক পান টেস্ট স্কোয়াডে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে মেরিট বুঝে খেলতে পারা তাঁকে দলে নিয়মিতও বানিয়ে দিয়েছিল। দ্রুতই ভারতের টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে যান তিনি।
মুরালি বিজয় ছিলেন এমন একজন ওপেনার যিনি ঘর আর ঘরের বাইরে সমানে পারফর্ম করতে পারতেন। সবই ঠিক চলছিল, হঠাৎই ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফরে বাজে পারফর্ম করে ফেলেন তিনি। আর এরপর থেকেই দলে তিনি ব্রাত্য। ৬১ টেস্টে ৩৮.২৯ গড়ে ৩৯৮২ রানে আটকে আছেন তিনি!
- অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে স্মিথের জায়গা পাওয়াটা সব সময় কঠিন ছিল। সেই কঠিন থাকার কারণ টপ অর্ডারে ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, ক্যামেরন ব্যানক্রফটের উপস্থিতি। তবে স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে এরা নিষিদ্ধ হওয়ায় ফিঞ্চের সামনে বড় সুযোগই এসেছিল। যদিও ফিঞ্চ লাল বলে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।
ফিঞ্চের অভিষেক হয় পাকিস্তানের সাথে। অভিষেকের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে ফিঞ্চের রান ছিল ৬২ আর ৪৯। এরপর আরো কয়েক ম্যাচ সুযোগ পেলেও গড়পড়তা পারফর্ম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ফিঞ্চের অর্জন ৫ টেস্টে ২৭.৮ গড়ে ২৭৮ রান!
- জেসন রয় (ইংল্যান্ড)
আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম বিধ্বংসী ওপেনার জেসন রয়। সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বড় ভরসার নামও তিনি। সেই রয়কে একবার ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ দিল, উদ্দেশ্য ছিল ইংল্যান্ডের ওপেনিং সমস্যার সমাধান করা। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকও হয়ে গেল রয়ের।
কিন্তু সমস্যা যেটা দেখা দিল, লাল বলের ক্রিকেটেও রয় নিজের খেলার ধরণ বজায় রাখলেন একেবারের লাল বলের মতই। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের উদ্দেশ্য এতে পূরণ হল না, তাঁরা রয়কে বাদ দিয়ে তরুণ ওপেনিং জুটি বার্নস আর সিবলীকে সুযোগ দিল। এই জুটি এখন অব্দি যেভাবে খেলছে, তাতে রয় আবার সুযোগ পাবে বলে মনে হচ্ছে না।
এই ওপেনার ৫ টেস্ট খেলে ১৮.৭ গড়ে করেছেন ১৮৭ রান।
- ডেন ভিলাস (দক্ষিণ আফ্রিকা)
ডেন ভিলাস ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম পছন্দের উইকেট কিপার, অন্তত সাদা পোশাকে । ২০১৫ সালে ভারতের সাথে অভিষেকও হয় ডেন ভিলাসের। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্ষিপ্র এই কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে একদমই কাজের কাজ করতে পারছিলেন না। লোয়ার-মিডল অর্ডারে নেমে বারবারই হচ্ছিলেন ব্যর্থ।
ঠিক সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে আবির্ভাব হচ্ছিল ডি কক এর। নির্বাচকেরা ডেন ভিলাসকে বাদ দিয়ে ছুটলেন ডি ককের পিছে। ডি ককও ভাল করতেও শুরু করলেন। এরপর আর কোনদিন ডেন ভিলাসের দলে ফেরা হয়নি।
৬ টেস্টে ১০.৪৪ গড়ে ৯৪ রান করা এই ব্যাটসম্যান এখন কলপ্যাক চুক্তিতে ইংল্যান্ডে আছেন!
- মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
মার্টিন গাপটিল তাঁর স্বপ্নের টেস্ট ক্যাপ পান ২০০৯ সালে। কিন্তু শুরু থেকেই যে ব্যাপারটা দেখা যাচ্ছিল, টেস্ট ক্রিকেটেও গাপটিল ছিলেন ভীষণ আক্রমণাত্মক। তা আক্রমণাত্মক থাকা তো সমস্যা নয়, কিন্তু সেই আক্রমণের কোনটাই পরিণতি পাচ্ছিল না। উড়ন্ত শুরু এনে দিয়ে গাপটিল আউট হয়ে যাচ্ছিল বড় স্কোর ছাড়াই।
এভাবে তো আর টেস্ট ক্রিকেট হয়নি, গাপটিলের জন্যে হয়ওনি কখনও। ২০১৬ সালে ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর গাপটিলকে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড, দলে সুযোগ পায় রাভা, ল্যাথামের মত তরুণেরা। এরপর আর গাপটিলের টেস্ট দলে ফেরা হয়নি। ৪৭ টেস্ট ২৯.৩৯ গড়ে এই ওপেনার করেছেন ২৫৮৬ রান। এই পরিসংখ্যান কোনো ভাবেই তাঁর নামের সাথে যায় না।