রাব্বি নাকি মিরাজ? কে খেলবেন সাতে?

ইয়াসির আলী রাব্বি নাকি মেহেদী হাসান মিরাজ? সাত নম্বরে ব্যাট করবেন কে? মহামূল্যবান এক প্রশ্ন। কারণ আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন থেকেই একাদশ সাজানোর দিকে চোখ টিম ম্যানেজমেন্টের।

তবে নিরাশার ব্যাপার হলো, এই পজিশনে দুজনের কেউ-ই আসলে সেই অর্থে সফল নন। ঘরের মাটিতে আইরিশদের বিপক্ষে শেষ সিরিজে ৭ নম্বরে খেলেছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। দুই ম্যাচেই একদম শেষের দিকে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

অনুমিতভাবেই অতি আহামরি পারফর্ম করার মঞ্চটা পাননি। তাছাড়া, দুই ম্যাচের স্যাম্পল সাইজে কোনো ব্যাটারকেই বা ব্যর্থ কিংবা অব্যর্থ রায় দিয়ে দেওয়া যায়! ইয়াসির আলী রাব্বি তাই আরো বেশ কয়েকটা ম্যাচের সুযোগের আশা করতেই পারেন।

তবে অনেকেই মনে করেন, এই মুহূর্তে ৭ নম্বরে ব্যাট করার উপযুক্ত নামটা হলো মিরাজ। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অলরাউন্ডার পরিচয়ে পরিচিতি পেলেও বাংলাদেশ দলে তাঁর আগমন ঘটেছিল শুধুই বোলার হিসেবে। তবে সময়ের ব্যবধানে কার্যকরী বেশ কিছু ইনিংস খেলে ইতোমধ্যেই ব্যাটিং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন মিরাজ।

ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়েই ৮ নম্বরে ব্যাট করেছেন মিরাজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি আর দুটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন এই পজিশনে ব্যাট করেই। তাই অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই তাঁকে ৭ নম্বর ব্যাটে দেখতে চান। কিন্তু বাস্তবতা বলে, এই ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করে ডাহা ফেল করেছেন মিরাজ!

এখন পর্যন্ত ৭ নম্বরে ৭ বার ব্যাটিং করে মিরাজ তাঁর ঝুলিতে যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ৪২ রান। ব্যাটিং গড় যেখানে মাত্র ৬! আবার এই পজিশনে তিনি কতটা নড়বড়ে তার প্রমাণ মিলে ৫৭.৩৩ ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট।

এ দিক দিয়ে অবশ্য রাব্বি বেশ খানিকটা এগিয়ে আছেন। ৭ নম্বরে ব্যাটিং নেমে ২ ইনিংসেই দেখিয়েছেন ইতিবাচক অ্যাপ্রোচ। রান করেছেন মোটে ২৪ টা। তবে সেই রান এসেছেন ১৪১.১৮ স্ট্রাইকরেটে।

ইয়াসির আলী রাব্বিকে পুরোদস্তুর ব্যাটার বলেই বিবেচনা করা হয়। প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের শেষ সিরিজের পরিকল্পনায় তিনি ভালভাবেই ছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় আছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজেও। বোঝাই যাচ্ছে, কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গাটায় একজনকে প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায় আছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ইয়াসির আলী রাব্বিকেই কি সাতে দেখা যাবে?  এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হতে পারে কন্ডিশন। এখন ইংলিশদের মাটিতে বাংলাদেশ কি বোলিং শক্তি বাড়ানোর দিক নজর দিবে নাকি ব্যাটিং গভীরতাতেই থাকবে নজর, এসব কিছুর উপরেই ঝুলে আছে রাব্বি, মিরাজের ভাগ্য।

অবশ্য সাত নম্বরে সুযোগ না পেলেও আট নম্বরে নিশ্চিতভাবেই জায়গা পাবেন মিরাজ। আর রাব্বির ক্ষেত্রে আবার সাতে সুযোগ না পেলে একদম একাদশ থেকেই বাদ পড়া নিশ্চিত হবে। মোদ্দাকথা, এ দুই ব্যাটারের কেউই এখন পর্যন্ত ৭ নম্বরে আশা জাগানিয়া কিছু করে দেখাতে পারেনি। যদিও দুজন মিলে মাত্র ৯ ম্যাচেই ৭ নম্বরে সুযোগ পেয়েছেন। তাই ৭ নম্বরে অনভিজ্ঞ এ দুই ব্যাটারের মাঝেই একজনকে বেছে নিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

বাংলাদেশের হয়ে ৭ নম্বরে অবশ্য কিছুটা সামর্থ্যের জানান দিয়েছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ক্যারিয়ার সেরা ৯৩ রানের ইনিংস সহ সর্বোচ্চ দুটি ফিফটি পেয়েছিলেন এই পজিশনে ব্যাটিং করেই। গড়টাও মন্দ ছিল না, ৩১।

তবে, শেষ কয়েকটা সিরিজে রান খরায় থাকায় বাঁ-হাতি এ ব্যাটার এই মুহূর্তে স্কোয়াডেই নেই। তাই ৭ নম্বর পজিশনে নতুন কাউকে প্রতিষ্ঠিত করার দিকেই নজর রয়েছে বাংলাদেশের।

সে ক্ষেত্রে রাব্বি কিংবা মিরাজকেই সামনের দিনগুলোতে ৭ নম্বরে ব্যাটিং করতে দেখা যাবে। এখন দেখার পালা, এমন সুবর্ণ সুযোগকে কতটা কাজে লাগাতে পারেন। মিরাজের জন্য অবশ্য একটা লাইফ লাইন আছে। সেটা তাঁর বোলিং। কিন্তু রাব্বির ক্ষেত্রে একমাত্র লাইফ লাইনই হচ্ছে তাঁর ব্যাটিং। এই লাইফ লাইনটা নিশ্চয় হেলায় হারাতে চাইবেন না তিনি।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link