রোনালদোর পিছনে আল নাসেরের বিনিয়োগের রহস্য

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর পর থেকেই মূলত তাদের নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় এছাড়া আর কোন পরিবর্তন কি হয়েছে দলটার? তাহলে নির্ঘাত উত্তর আসবে 'না'। রোনালদোর আগমনের আগে সৌদি অঞ্চলে কোন অর্জন ছিল না আল নাসেরের, এখনো একই অবস্থায় আছে তাঁরা।

বছর তিনেক আগে আল নাসেরের নামই জানতেন না ফুটবলপ্রেমীরা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে দলে ভেড়ানোর পর থেকেই মূলত তাদের নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, যদি প্রশ্ন করা হয় এছাড়া আর কোন পরিবর্তন কি হয়েছে দলটার? তাহলে নির্ঘাত উত্তর আসবে ‘না’।

রোনালদোর আগমনের আগে সৌদি অঞ্চলে কোন অর্জন ছিল না আল নাসেরের, এখনও একই অবস্থায় আছে তাঁরা। গত কয়েক বছরে বড় কোন ট্রফিই জিততে পারেনি, রোনালদো নিজের পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারেননি আসলে।

তবু পর্তুগিজ সুপারস্টারের পিছনে অর্থ ঢালতে কার্পণ্য করছে না ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট। দু’পক্ষের মাঝে নতুন চুক্তি হতে যাচ্ছে, যে চুক্তির অধীনে তিনি প্রতিদিন পাবেন পাঁচ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ইউরো। অঙ্কটা কিন্তু আকাশচুম্বী! প্রতি বছর কেবল বেতন থেকেই তাঁর আয় হবে ১৮৩ মিলিয়ন ইউরো, যা কি না মাসিক ১৫ মিলিয়ন ইউরোর সমান।

এর মানে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার এখন এই স্ট্রাইকার। শুধু কি তাই ক্লাবের পাঁচ শতাংশ মালিকানাও পাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সত্যিই কি এতটা বিলাসিতা তাঁর প্রাপ্য? তিনি আসলে কি দিতে পেরেছেন ক্লাবকে, উত্তর খুঁজতে গেলে কেবল একটা আরব কিংস কাপ পাবেন। অথচ তাঁর দলে থাকা মানেই একটা সময় ছিল একগাদা শিরোপার নিশ্চয়তা।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ সবকিছুই জিতিয়েছিলেন এই তারকা। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে তো তাঁর সাফল্য ছাড়িয়ে গিয়েছে দূরতম কল্পনাকেও, তিনি হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সেরা।

সেই তুলনায় আল নাসের এই ফরোয়ার্ডের জন্য একটা ব্যর্থ অধ্যায়। প্রো লিগে আল হিলালের দাপটে তো টিকতেই পারছেন না, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও এখনো সুবিধা করতে পারেননি তিনি।

তাহলে কেন আল নাসের রোনালদোর সঙ্গে নতুন আরেকটা অধ্যায়ের সূচনা করতে চায়? তাঁরা কি কেবল খ্যাতির দিকেই মনোযোগী, ফুটবলীয় সাফল্যের প্রয়োজন নেই? মোটেই না, মূলত আল নাসের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে চাচ্ছে। সাময়িক এক দুইটা টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের চেয়ে ক্লাবে সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরি করা, ড্রেসিংরুম সংস্কৃতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন তাঁদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। আর এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন সিআরসেভেন।

মধ্যপ্রাচে পাড়ি জমানোর পর থেকেই তাঁর মানসিকতা, ডেডিকেশন টিম ম্যানেজম্যান্টকে দারুণভাবে অভিভূত করেছে। তাই ভবিষ্যতের জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে তাঁকে আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করতে চান তাঁরা।

রোনালদো নিজেও অবশ্য পছন্দের ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোর স্বাধীনতা পাচ্ছেন এবার। তাঁর সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া আছে এমন তারকাদের নিয়ে আল নাসেরকে আরো শক্তিশালী করে তুলবেন নিশ্চয়ই। এক্ষেত্রে ক্যাসেমিরোর নামটাই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে, হয়তো ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত এই ব্রাজিলিয়ানের সঙ্গে একই দলে দেখা যাবে তাঁকে।

যদিও আপাতত সব আকর্ষণ পাঁচবারের ব্যালনজয়ীকে ঘিরে। দ্বিতীয় মেয়াদে আল নাসেরকে কতটা সাফল্য এনে দিতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। ট্রফির হিসেবে কতটা সাফল্য পাবেন সেটা নিশ্চিত না হলেও অন্তত যেন পরবর্তী প্রজন্মকে প্রস্তত করতে পারেন সেটাই প্রার্থনা।

Share via
Copy link