প্রস্তুতির ঘাটতির পরও পাকিস্তানই সেরা

পরিসংখ্যানে চোখ দিলেই দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান আসলে নিয়মিত পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ খেলেনি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর থেকে মাত্র ২৮বার মাঠে নেমেছিল পাকিস্তান ওয়ানডে দল। আধুনিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচির কথা ভাবলে স্পষ্ট যে পাকিস্তান আসলে অনেক কম খেলার সুযোগ পেয়েছে।

চলতি এশিয়া কাপের আগেও খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি বাবর আজমের দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বাদ দিলে, মাত্র আট ম্যাচ খেলেছে তাঁরা। সবগুলোই আবার ছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। সেখানেও আবার কিউইদের পূর্ণ শক্তির দল ছিল না। তাই এটিকে বিশ্বকাপের আদর্শ প্রস্তুতি বলার সুযোগ নেই।

কিন্তু তাতে কি’বা এসে যায়, পাকিস্তান ঠিকই ছুটছে নিজের গতিতে। আসন্ন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট তাঁরা। এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে দলটি। কম ম্যাচ খেলা সত্ত্বেও ভারতের চেয়ে গুছানো স্কোয়াড রয়েছে পাকিস্তানের।

১৯৯২ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা সবসময়ই পেস আক্রমণভাগের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে প্রতিপক্ষের চেয়ে। কিন্তু এবার পেসারদের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানরাও দারুণ ফর্মে আছেন। ফখর জামান, ইমাম উল হক আর বাবর আজমকে নিয়ে তৈরি টপ অর্ডারের কেউ না কেউ প্রায় সব ম্যাচেই রান পাচ্ছেন; আবার মিডল অর্ডারের দায়িত্বে মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতেখার আহমেদের মত ব্যাটাররা আছেন।

অন্যদিকে স্পিনার হিসেবে শাদাব খান বরাবরই পাকিস্তানের প্রথম পছন্দ। এই লেগ স্পিনার মাঝের ওভারগুলোতে রান আটকানোর পাশাপাশি উইকেটও তুলে নিতে জানেন। চাইলে মোহাম্মদ নওয়াজকেও ব্যবহার করতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্ট। এছাড়া পার্ট টাইমার হিসেবে ইফতেখার, আঘা সালমানরা তো আছেনই।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সুবিধা বোধহয় তাঁদের সুদৃঢ় বোলিং টেমপ্লেট। শুরুতে শাহীন শাহ আফ্রিদির ইনসুইং; শাহীনের বিষাক্ত সুইং সামলাতে পারলে নাসিম শাহ ঠিকই উইকেট তুলে নিবে। অভিষেকের পর থেকে টানা তেরো ম্যাচেই উইকেট পেয়েছেন এই তরুণ।

নতুন বলে দুজনকেই এড়িয়ে যেতে পারলেও হারিস রউফের গতি থেকে বাঁচার উপায় কই। এদের বাইরেও আছেন ফাহিম আশরাফ, গতি অতও বেশি না হলেও সিম মুভমেন্টে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন এই অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচ দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বাবর আজমের পরিকল্পনা। পাওয়ারপ্লেতে ডানহাতি-বামহাতি কম্বিনেশন দিয়ে শুরু; শাহীন আর নাসিম উভয়েই ইন লাইন বোলিং করে বেকায়দা করে বেকায়দায় ফেলে দেন টাইগার টপ অর্ডারকে। এরপর হারিস রউফ তাঁর এক্সপ্রেস পেসে গুঁড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের লাইনআপ।

আবার সাকিব, মুশফিকের শতরানের জুটি ভেঙে অবদান রেখেছিলেন ফাহিম আশরাফ। পার্ট টাইমার ইফতেখারও শিকার করেছেন একটি উইকেট।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মেহেদি মিরাজ এদিন ফিরে গিয়েছিলেন প্রথম বলেই, বাকিরাও স্থায়ী হতে পারেননি বেশিক্ষণ। অভিজ্ঞ সাকিব, মুশফিক ছাড়া আর কারো ব্যাটেই ছিল না নূন্যতম প্রতিরোধ – পাকিস্তানের বোলিং কতটা বিধ্বংসী ছিল সেটারই প্রমাণ দেয় এই ম্যাচের স্কোরকার্ড। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের বিপক্ষেও এমন আগ্রাসী ছিল পাক বোলাররা।

কিন্তু পাকিস্তান সবসময়ই আনপ্রেডিক্টেবল, এমন দুর্দান্ত ফর্ম নিয়েও হয়তো ট্রফি জেতা হবে না তাঁদের। আবার উল্টোটাও হতে পারে, খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গড়তে পারে নতুন ইতিহাস – এখন দেখার বিষয়, বাবর আজমের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link