স্কোরশিটে তাঁর নাম নেই। স্কোর শিটে থাকবে পিওতর জিলেনস্কি আর রবার্ট লেভানডফস্কির নাম। কারণ তাদের গোলেই ম্যাচ জিতেছে পোল্যান্ড। তবে পোলিশদের এ ম্যাচ জয়ের নায়ক হিসেবে আরেকজনের নামও যুক্ত হতে পারে। তিনি গোলরক্ষক ভয়চেক শেজনি। পুরো ম্যাচে যিনি পোলিশদের গোলবার সামলেছেন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে।
ম্যাচের স্কোরলাইন দেখে বুঝার উপায় নেই যে, এ ম্যাচে মুহুর্মুহু আক্রমণে পোলিশ ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রেখেছিল সৌদি ফুটবলাররা। তবে ম্যাচে ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যায় পোল্যান্ড। কিন্তু সমতা ফেরানোর একটা সুযোগ কিছুক্ষণ বাদেই পেয়েছিল সৌদি আরব। ডি বক্সে আল শেহরি একটি ফাউলের শিকার হন। আর সাথে সাথেই ভিএআরের মাধ্যমে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
পেনাল্টি নিতে স্পটকিকে এসেছিলেন আগের ম্যাচের গোলদাতা আল দাওসারি। মেরেছিলেন ডান দিকেই। কিন্তু শেজনির কৌশলে আটকে যান তিনি। বামে লাফানোর প্রচেষ্টা দেখিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন সেই ডানদিকেই।
দাওসারির কিক করা বল সেভ করলেন বটে। কিন্তু সেখানেই তো শেষ হয়ে যায়নি। ফিরতি বলে দারুণ এক শট তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছিল। আর সেটিও তিনি ঠেকিয়ে দেন দুর্দান্ত ভাবে। আর এর মধ্যে দিয়ে পোল্যান্ডকে সেই বিপদের মুহূর্ত থেকে বাঁচিয়ে দেন নিজের বীরত্বে।
পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে পোল্যান্ডের বিশ্বকাপ ইতিহাসে একটি নামও লিখিয়ে ফেলেন শেজনি। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপের মঞ্চে শেষবার কোনো পোলিশ গোলরক্ষক পেনাল্টি শট ঠেকিয়েছিলেন। এরপর ৪৮ বছর বাদে, ২০২২ বিশ্বকাপে আবারো কোনো পোলিশ গোলরক্ষক পেনাল্টি সেভ করলেন। আর সেটি হলো, শেজনির বদৌলতেই।
পেনাল্টি সেভের পর সৌদি আরবের আরো বেশ কিছু আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল শেজনিকে। কিন্তু সৌদি আরবের করা ৯ টি অন টার্গেট শট তিনি সফল ভাবেই সামলেছেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো সৌদি আরব।
ডি বক্সের ভিতরে ঢুকে পোলিশ ডিফেন্ডারদের টপকে গোলমুখো একটি শট প্রায় ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রাতেও পোল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দেন শেজনি।
এমনিতে এ মৌসুম জুড়ে গোলবারে দারুণ ছন্দেই আছেন শেজনি। জুভেন্টাসের হয়ে এবার সিরিআতে ৯ ম্যাচের মধ্যে ৬ টিতেই ধরে রেখেছিল ক্লিনশিট। অর্থাৎ ঐ ৬ ম্যাচে কোনো গোলই হজম করেননি এই গোলরক্ষক। কাতার বিশ্বকাপে তাই প্রতিপক্ষ সব দলের আক্রমণ ভাগের জন্য আতঙ্কের এক নাম হতে পারেন ভয়চেক শেজনি।
গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার আক্রমণ বরাবরই শক্তিশালী। তাই সে ম্যাচে আবারো কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হতে পারে শেজনিকে। তবে এমন বড় ম্যাচ গুলোতেই তো নিজেকে জ্বলে উঠতে হয়।
আলিভার কান, ইকার ক্যাসিয়াস, জিয়ানলুইজি বুফনরা তো গ্রেট গোলরক্ষক হয়েছেন – এমন সব বড় বড় চাপ সামলেই। তাই শেজনিকেও এমন সব চাপের পরীক্ষায় উতরাতে হবে। তবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে পূর্বসূরিদের পাশের বসতে পারবেন তিনি।