রক্ষণের ডানপ্রান্ত নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ভোগান্তিটা বহুদিনের। প্রায় এক যুগ ধরে দানি কারভাহাল ভরসা জোগালেও গত কয়েক মৌসুম ধরে ইনজুরির সুবাদে মাঠের বাইরেই থাকছেন বেশি। আসন্ন মৌসুমে তাই স্প্যানিশ রাইটব্যাক পেদ্রো পোরোকে দলে ভেড়ানোর মিশনে নেমেছে লস ব্ল্যাংকোসরা।
বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদে রাইটব্যাক হিসেবে দানি কারভাহাল ছাড়াও রয়েছেন লুকাস ভাসকেজ এবং আলভারো ওদ্রিওজোলা। এছাড়া রক্ষণভাগের সকল পজিশনে খেলতে জানা নাচো ফার্নান্দেজেরও রাইটব্যাক হিসেবে মাঠে নামার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু তাঁরা কেউই বিশ্বমানের নন। সে কারণেই কিনা নতুন রাইটব্যাক কেনা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য।
অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে আসন্ন লা লিগের ম্যাচের কথাই ধরুন না। প্রথম পছন্দের দুই রাইটব্যাক কারভাহাল এবং ভাসকেজ দুজনেই ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে নাচোই সম্ভবত খেলবেন শুরু থেকে। ভাসকেজ পাঁচ সপ্তাহের জন্য ছিটকে গেলেও কারাভাহালের ফেরার কথা পরের ম্যাচ থেকেই।
তবে তাঁদের ইনজুরি ছাড়াও নতুন রাইট ব্যাক দলে ভেড়ানো প্রয়োজনীয় ছিল মাদ্রিদের জন্য। ক্রমাগত ইনজুরিতে আক্রান্ত কারভাহাল পুরনো ধার হারিয়ে ফেলেছেন কয়েক মৌসুম। কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তি এবং লড়াকু মানসিকতার সুবাদে এখনো টিকে আছেন শীর্ষ লিগে। ভাসকেজ ব্যাকাপ অপশন হিসেবে ঠিক থাকলেও প্রথম একাদশে শুরু করবার মত নন। অন্যদিকে, ওদ্রিওজোলা এখনো নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে পারেননি মূল দলে।
এজন্যই আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দলবদলে নতুন রাইটব্যাক ভেড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। শুরুতে শোনা গিয়েছিল মরক্কোর রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমিই ফিরছেন পুরনো ক্লাবে। এছাড়া রিয়াল ভালাদোলিদের তরুণ ইভান ফ্রেসান্দার প্রতিও আগ্রহী মাদ্রিদ এমনটাও গুঞ্জন উঠেছিল। তবে আপাতত ফ্রেসান্দা আর্সেনালে যাচ্ছেন এমনটা এক প্রকার নিশ্চিত। সব মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ এবার উঠেপড়ে লেগেছে ২৩ বছর বয়সী স্পোর্টিং সিপির স্প্যানিশ রাইটব্যাক পেদ্রো পোরোকে দলে টানতে।
ম্যানচেস্টার সিটিতে বেড়ে ওঠা পোরো আক্রমণে উঠতে অনবদ্য। উইং বরাবর দারুণ গতিতে আক্রমণে ওঠার পাশাপাশি দূরপাল্লার শটে গোল করতে পটু এই রাইটব্যাক। নিজেদের অর্ধের চাইতে প্রতিপক্ষের অর্ধে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। পরিসংখ্যানও সেটাই বলে, এই মৌসুমে ১৪ ম্যাচে মাঠে নেমে দুই গোলের পাশাপাশি ছয় অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর নামের পাশে।
স্পোর্টিং সিপিতে রুবেন আমোরিমের ৩-৪-৩ ফর্মেশনে পোরো মূলত রাইট উইংব্যাক হিসেবে খেলে থাকেন তাঁর আক্রমণে পারদর্শীতার কারণে। পেছনে অতিরিক্ত সেন্টারব্যাক খেলিয়ে রুবেন পোরোকে লাইসেন্স দিয়েছেন নির্বিঘ্নে আক্রমণে ওঠার।
ডিফেন্সে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে পোরোর আগ্রহ তাই কম। ট্যাকল, ইন্টারসেপশন কিংবা বল দখলের লড়াইতে তাই তিনি পিছিয়েই থাকবেন কারভাহালের চাইতে। এছাড়া শূন্যে বল দখলের লড়াইতেও বেশ দুর্বল পোরো। এর আগে জিরোনা এবং রিয়াল ভালাদোলিদের হয়ে লা লিগায় খেলার অভিজ্ঞতা আছে পোরোর। কাতালুনিয়ার ক্লাবটিতে ভাল করলেও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার চাপটা বেশি সেটা নিশ্চয়ই ভাল করেই জানেন তিনি।
অন্যদিকে, কার্লো আনচেলত্তি তাঁর দলে সবসময় ডিফেন্সিফ মানসিকতার ফুলব্যাক খেলিয়ে থাকেন। ইতালিয়ান কাতেনাচ্চিও ঘরানার এই কোচ সবসময় রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার পক্ষপাতী। সুতরাং পোরো যদি মাদ্রিদে যোগ দেন সেক্ষেত্রে একাদশে জায়গা পেতে তাঁকে রক্ষণে উন্নতি আনতে হবে সেটা বলাই বাহুল্য।
তবে পোরোকে দলে ভেড়াতে ভালোই বেগ পোহাতে হবে মাদ্রিদকে। ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার পোরোর জন্য ইতোমধ্যেই ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্পোর্টিং সিপির কাছে। তবে টাকার অংক কখনোই বাঁধা নয় রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। সুতরাং আসন্ন গ্রীষ্মে পেদ্রো পোরোকে মাদ্রিদের ডেরায় দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।