‘অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথুর সাথে কিপিংয়ের ‘ওয়েড’ হয়নি কোনোদিন। বিসদৃশ বললেও কম বলা হয়!’ – গেল ২৬ মার্চ ২০২২ শুরু হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ১১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে গুজরাট টাইটান্স বনাম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ম্যাচের পরে এমন কিছু লিখেছিলাম। লখনৌ সুপার জায়ান্ট, দিল্লী ক্যাপিটালস আর পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে টানা ৩ ম্যাচে পুরো পয়েন্ট পাওয়ার পরে সেদিনই প্রথম হেরেছিল গুজরাট টাইটান্স।
লেখাটা দেখে চটজলদি সর্বপ্রথম মন্তব্য ছিল এক বন্ধুর, ‘লাভ নেই। আপনি যা চাইছেন তা হবে না, যদি না গুজরাট টানা হারে।’ তাঁর মতকে মান্যতা দিয়ে ১৪ এপ্রিল পরের ম্যাচেও গুজরাট জেতে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে, খেলেন ম্যাথু ওয়েডই।
তার পরের ম্যাচে অবশ্য ১৭ এপ্রিল চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে দলের ষষ্ঠ খেলায় প্রথম ম্যাচ খেলেন ‘আমি যাকে চাইছিলাম’ – তিনিই। তারপরে কথামত ‘গুজরাট টানা হারে’নি, তবু শেষ অবধি আর তাকে বসানো যায়নি, একটি ম্যাচেও ( ২৩ এপ্রিল কলকাতা, ২৭ এপ্রিল হায়দ্রাবাদ, ৩০ এপ্রিল ব্যাঙ্গালুরু, ৩ মে পাঞ্জাব, ৬ মে মুম্বাই, ১০ মে লখনৌ, ১৫ মে চেন্নাই, ১৯ মে ব্যাঙ্গালুরু ও প্রথম কোয়ালিফায়ারে ২৪ মে রাজস্থানের বিরুদ্ধে এবং সর্বশেষ ফাইনালে ২৯ মে রাজস্থানের বিপক্ষে)।
১১টি ম্যাচে ৩টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ৩১৭ রান (সর্বোচ্চ ৬৮) করে তার কাজ তিনি করে দিয়েছেন ভালোভাবেই।গড় ৩১.৭০, স্ট্রাইকরেট ১২২.৩৯। সঙ্গে আছে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ১১ টি ক্যাচ, স্টাম্পিং দুটি।
অভিযোগ, তিনি ‘খারুস’ নন, ভালো ব্যাটার নন। তিনি ঋদ্ধিমান সাহা। উইকেটরক্ষণ নিয়ে কাউকে কিছু অবশ্য বলতে শুনিনি এখনো। তাই তার IPL কেরিয়ার জুড়ে তাকে নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অবহেলার জলে লোফালুফির রঙ গোলা আলপনা আঁকা এবং তার বিরুদ্ধে তাঁর ‘সপাটে জবাব’ এখন স্বাভাবিকতম ঘটনা।
এবারেও নিলামের প্রথম দিন ‘আনসোল্ড’ থাকার পরে আইপিএলে নবাগত গুজরাট টাইটান্স তাকে নেয় দ্বিতীয় দিনে, একেবারে শেষ মুহূর্তে। তারপর প্রথম পাঁচটি ম্যাচে বসিয়ে রাখে। ১১টি ম্যাচে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি-সহ ৩১৭ রান (সর্বোচ্চ ৬৮) আবার একটি ‘সপাটে জবাব’, এবারও।
আর সেজন্যই আইপিএলের ২০২২ সালে ফাইনালেও রাজস্থানের বিরুদ্ধে হার্দিক-মিলার-শুভমান-রাহুল-রশিদদের সঙ্গে তার দিকেও তাকিয়ে ছিল গুজরাট। তার প্রদর্শন বা ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, তার ‘সপাটে জবাব’-এর দলিলনামা এবারেও সই করে ফেলেছেন তিনি।
সপাটে জবাব দেবেন। আবার বাদ পড়বেন। আবার ফিরবেন।
আবার সপাটে জবাব দেবেন। আবার বাদ পড়বেন। আবার ফিরবেন।
আবার সপাটে জবাব দেবেন। – এভাবে চাকার মত এই পথে ঘুরে যাওয়াই তাঁর রুটিন। সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে, বারবার।
হয়ত তাই বুকের বাঁদিকে পাকাপাকিভাবে বিশাল ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন ঋদ্ধিমান সাহা, চিরদিন থেকে যাবার জন্য।যেখানে দেখনদারির কাঠপোড়া গরমে একটু নির্ভরতার আশ্রয় মিলবে আরো অনেকদিন। দৃশ্য বা অদৃশ্য, ভারতীয় ফিল্ডিংয়ের সময় উইকেটের পিছনে তাকেই দেখব আরো অনেকদিন। ছবির ভদ্রলোকের মত উদাসীন ভাবেই।