জয়সওয়াল, ভারতীয় ব্যাটিং আভিজাত্যের নব্য ‘যশস্বী’

ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম। ঝর্ণার মতো চঞ্চল। যশস্বী জয়সওয়াল পাহাড়ের মতো নির্ভীক। তার ব্যাটে রান প্রকৃতির মতো স্বচ্ছল। কি অভাবনীয় এক প্রতিভা! নিজের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় দ্বিশতক। এমন ক্রিকেটীয় চরিত্রের দেখা তো আর সচারচর মেলে না। যশস্বী নিজের নামের মতই যেন কীর্তিমান হওয়ার ব্রত নিয়েই হাজির হয়েছেন দৃশ্যপটে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন। দুই ইনিংস আগেই যা তিনি প্রথমবারের মত ছুঁয়ে দেখেছিলেন। বিশাখাপাটনম থেকে খেলা গড়িয়েছে রাজকোটে। তবুও যেন এক চিলতে চির ধরেনি জয়সওয়ালের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের সামনে ২২ বছর বয়সী ব্যাটার দেখিয়ে যাচ্ছেন মুন্সিয়ানা।

জয়সওয়াল সবে মাত্র খেলেছেন সাতটি টেস্ট। এরই মধ্যে তিনটি শতকের দেখা পেয়ে গেছেন বা-হাতি এই ওপেনার। যার দুইটিকেই তিনি ২০০-তে রুপান্তরিত করেছেন। যে ইনিংসটিতে পারেননি, সেটাও শেষ করেছেন ১৭১ রানে। এমন সব ইনিংসই যেন জয়সওয়ালকে ধাবিত করছে অবিসংবাদিত এক চরিত্রের পানে। তিনি যেন ক্রমশ হয়ে উঠছেন ভারতীয় ব্যাটিং ঐতিহ্যের যথাযথ ধারক ও বাহক।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রাজকোট টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ছুঁয়েছেন দ্বিশতকের মাইলফলক। জো রুটের বলটা কাভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়েই তিনি পূর্ণ করেন ২০০। দুই হাত আকাশ পানে তুলে দৌড়াতে দৌড়াতেই শুরু করেন উদযাপন। ক্রিকেটের বুকে আরও এক কিংবদন্তির যাত্রা শুরুর গল্পই যেন লিখছেন ব্যাটের আঁচড়ে। বিদ্রোহ তিনি ঘোষণা করেছেন বোলারদের বিপক্ষে।

ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে খেলে গেছেন ২৩৬ খানা বল। প্রায় ওয়ানডে ঢঙে ব্যাটিং করে গেছেন জয়সওয়াল। ২১৪ রান করে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। স্ট্রাইকরেট ৯০ এর একটু বেশি। এমন আগ্রাসনেই যে ইংল্যান্ডের মাথায় চেপে বসেছে রানের এভারেস্ট।

টেস্ট স্রেফ ধৈর্য্য দিয়েই খেলতে হয়। টেস্টে শুধুই সিংগেলস-ডাবলসেই ভরসা করতে হয়। এসব ধারণা বদলে দেওয়ার প্রয়াশই করে গেছেন তিনি রাজকোটের বাইশ গজে। ১২টি সুবিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন বা-হাতি এই ব্যাটার। ১৪টা বাউন্ডারিও এসেছে তার ব্যাট থেকে।

আগ্রাসন আর ধৈর্য্যের মিশেলের উদাহরণই যেন সৃষ্টি করে গেলেন জয়সওয়াল। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরেছলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপর শুভমন গিলের সাথে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন জয়সওয়াল। শুভমান ফিরে যান ৯১ রানে। রজত পাতিদার সাজঘরের পথ ধরেন শূন্য রানে। তবুও টলেনি জসওয়ালের পা। তিনি যেন সময়ের পরিক্রমায় জমে থাকা এক পাহাড় খণ্ডে রুপান্তরিত হয়েছিলেন।

ভারত সবসময়ই ব্যাটারদের বরদান পেয়ে এসেছে। তবে একজন পানিপুরী বিক্রেতা জয়সওয়াল যেন নিজেকে প্রস্তুত করেছেন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে; শরীরের রক্ত পানি করে। পরিশ্রমের চূড়ান্ত ফলাফলই যেন এসে ধরা দিচ্ছে যশস্বীর ব্যাটে। তবে তাতেও যে তার ক্ষুধা মেটে না।

তিনি তবুও পরিশ্রম করে যান। এই ক্ষুধার তাড়নাই একদিন হয়ত জসওয়ালকে বানাবে শচীন, কোহলিদের প্রতিদ্বন্দী। তাদের রেকর্ড গুলোও যে ক্রমশ হয় যাচ্ছে অরক্ষিত। জসওয়ালের ঝলক এখানেই নিশ্চয়ই শেষ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link