যে কোন ধরণের খেলাধূলাতে ফিটনেস পরিক্ষায় বিপ টেস্টের প্রচলন অনেক আগে থেকেই। তবে ২০১৭ সালে ভারতের স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ শংকর বসু চালু করেন ইয়ো ইয়ো টেস্ট। টেস্ট খেলুড়ে প্রায় সব দেশ ইয়ো ইয়ো টেস্ট ব্যবহার করলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফিটনেস পরিক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিপ টেস্ট। তবে এবার তাতে পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশও এখন আগ্রহী ইয়ো ইয়ো টেস্টে।
আরো পড়ুন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিক্যাল পারফরমেন্সের প্রধান ইংলিশ ফিটনেস ট্রেনার নিকোলস লি জানিয়েছেন এখন থেকে বিপ টেস্টের পরিবর্তে ইয়ো ইয়ো টেস্ট নেওয়ার চেস্টা করছেন তাঁরা। ক্রিকবাজকে তিনি বলেন, ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট এখন থেকে দেশের ক্রিকেটারদের ফিটনেস স্তর পরিমাপের জন্য স্ট্যান্ডার্ড মেট্রিক হিসাবে ব্যবহৃত হবে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ইয়ো ইয়ো টেস্টের প্রচলন ২০১৭ সালে এইচপি ক্যাম্পে শুরু হলেও জাতীয় দলে এবারই প্রথম। এইচপিতে ইয়ো ইয়ো টেস্ট চালু করার পর এবার জাতীয় দলে এটা চালুর জন্য মুখিয়ে আছেন বিসিবির হেড অব ফিজিক্যাল পারফরমান্স নিকোলস লি। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই ইয়ো ইয়ো টেস্ট চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তিনি।
নিকোলস লি জানিয়েছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা যে ভাবে ইয়ো ইয়ো পরিক্ষায় এসেছে তাতে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। এবং তিনি জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা এটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে পুরোনো বিপ টেস্টে তিনি ফিরে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন।
ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে লি বলেন, ‘এই মূহুর্তে এটি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে চেষ্টা করব। যদি এটি কাজ না করে তবে আমরা আগের অবস্থানে ফিরে যাবো ও অন্য পদ্বতির চেস্টা করবো। এই মুহূর্তে আমি এই পদ্বতিটি এক দৃষ্টিনন্দন হিসাবে দেখতে চাই। আপনি অন্য ব্যাক্তির সাথে একই স্তরে পৌঁছাতে পারবেন না তবে আপনি নিজের উন্নতি করতে পারবেন। আমি তাদের দোষ খুঁজে পাইনি। প্রত্যেকে চেষ্টা করেছিলো এবং আরো ভালো স্কোর অর্জনে ব্যস্ত ছিলো এবং চেষ্টা করে চলেছে।’
টেস্ট খেলুড়ে শীর্ষ দশের প্রায় সব দলই ক্রিকেটারদের ফিটনেস টেস্ট করতে ইয়ো ইয়ো টেস্ট ব্যাবহার করে। প্রয়োজনে বাইরের দেশের নির্বাচকদের কাছে থেকেও এ ব্যাপারে ধারণা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নিকোলাস লি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের এই ফিটনেস ট্রেনার বলেন, ‘শীর্ষ দশে মাত্র একটি দেশ রয়েছে যারা ইয়ো ইয়ো টেস্ট ব্যাতিত অন্য কিছু ব্যবহার করে। এখন আমাদের কাছে ইয়ো ইয়ো টেস্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে। আমরা ইংল্যান্ড পাকিস্তানের নির্বাচকদের কাছে থেকে তাদের ক্রিকেটারদের ফিডব্যাক নিতে পারি। দ্বিতীয় কারণ বৈজ্ঞানিক দৃস্টিকোণ থেকে আমি বিশ্বাস করি যে ইয়ো ইয়ো টেস্ট চারপাশের অ্যাথলেটিক ক্ষমতা গুলি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে আরও ভালো পরিক্ষা। বিপ টেস্টটি কেবল বায়বীয় কন্ডিশনিংকে ফোকাস করে। ইয়ো ইয়ো পরিক্ষাটি কিছুটা দ্রুত এবং এটি বিরতিহীন ‘
ইয়ো ইয়ো পদ্বতিতে পরবর্তিতে কাজ করা অনেক সহজ হবে এবং অন্যান্য দেশের সাথে সহজেই তুলনা করা যাবে বলে জানিয়েছেন লি। তিনি বলেন, ‘আমি ফিটনেস পরিক্ষার যে পদ্বতিতে সামঞ্জস্য করার সিদ্বান্ত নিয়েছি তার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। একটি হলো অন্য ১০ টি দল ইয়ো ইয়ো টেস্টকে তাদের মানদন্ড হিসাবে ব্যবহার করে। সুতরাং আমি এবং অন্য যে কোন প্রশিক্ষক কাজ করতে আসবে তাদের পক্ষে পরবর্তীতে এটি আরও সহজ হবে। এই পদ্বতিতে আমরা অন্যান্য দেশের সাথে নিজেদের তুলনা করতে পারবো।’
ইয়ো ইয়ো টেস্ট এখন অধিকাংশ টেস্ট দেশে প্রচলিত। ক্রিকেটারদের মধ্যে ইয়ো ইয়ো টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ডটা এখনো ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায় অ্যালিস্টার কুকের। তার স্কোর ২২.৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের সান মাসুদের স্কোর ২২.২ ও তৃতীয় স্থানে থাকা রাবাদার স্কোর ১৯.২।
বিপ টেস্টে লম্বালম্বি ভাবে ২০ মিটার দূরত্বে দুটো দাগ কাটা থাকে এখানে। এরপর একজন ক্রিকেটারকে এই দুই প্রান্তের মাঝে শাটল হাতে দৌড়াতে হয়। বিপ টেস্ট শুরুর ৫ সেকেন্ড আগে ট্রেইনার ‘৫ সেকেন্ড’ সূচক একটি সিগনাল দেন এবং এতে ক্রিকেটারটি দৌড়ের জন্যে টেক অফের প্রস্তুতি নেয়। এই ৫ সেকেন্ড পর ৩ টা বিপ শব্দের মাধ্যমে ক্রিকেটারদের দৌড় শুরু হয়।
বিপ টেস্টে মোট ২১ টা লেভেল আছে। প্রতি লেভেলেই শাটলের সংখ্যার তারতম্য আছে। সময় যত গড়ায়, লেভেল যত বাড়ে, এই শাটলের সংখ্যা প্রতি লেভেলেই তত বাড়তে থাকে। তবে ক্রিকেটারকে এই শাটল হাতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌছাতে হয় নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে। এই সময় শেষে একটি ‘বিপ’ শব্দ করা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, ক্রিকেটারকে শাটল নিয়ে অপর প্রান্তে পৌছাতে হবে ওই বিপ শব্দের আগেই! তবে অপর প্রান্তে পৌছে থেমে গেলেই হবে না, সেখান থেকে শাটল সংখ্যা বৃদ্ধি করে ক্রিকেটারকে আবার দৌড় দিতে হবে, টেক অফ ছাড়াই।
ইয়ো ইয়ো টেস্ট আসলে মূলত বিপ টেস্টের একটি ‘উন্নত রূপ’। বিপ টেস্ট প্রক্রিয়াটিকেই একটু জটিল আর সংশোধন করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট’।
বিপ টেস্টের মতই এখানেও ২০ মিটার দূরত্বে দুটো প্রান্তবিন্দু থাকে এবং এখানেও দুটো ‘বিপ’ শব্দের মাঝখানের সময়ের মধ্যে একজন ক্রিকেটারকে প্রান্তবিন্দু ছুঁয়ে আসতে হয়। তবে বিপ টেস্টের ক্ষেত্রে ক্রিকেটারের দৌড়ের গতি ধর্তব্য হয়না, কিন্তু ইয়ো ইয়ো টেস্টের ক্ষেত্রে একজন ক্রিকেটার কি গতিতে দৌড়াচ্ছে সেটি বিবেচনায় আনা হয় এবং স্কোর নির্ধারণে এটি বড়সড় একটা ভূমিকা রাখে।