সেই পুরনো মিরাজ

এবারের বিপিএলে তারুণ্য নির্ভর এক দল গড়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তারপর ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁদের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম। এমনিতেই অনেকদিন ধরে টি-টোয়েন্টি দলে নেই। এরপর বিপিএলের মত আসরে এত বড় দায়িত্ব। প্রথম ম্যাচে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচ হারলো মিরাজের চট্টগ্রাম।

একেবারে খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে সেদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন,’ আজ তো প্রথম ম্যাচ। আমাদের বুঝতে একটু অসুবিধা হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস দ্রুতই আমরা মানিয়ে নিব। এখনো অনেক ম্যাচ বাকি।‘ এরপর সত্যিই মিরাজরা গুছিয়ে নিয়েছেন।

পরেরদিনই ঢাকার বিপক্ষে বড় টার্গেট তাড়া করে জিতেছে চট্টগ্রাম। নিজের ব্যাটিং ও অধিনায়কত্ব দুটিরই ছাপ রেখেছেন ক্রিকেট মাঠে। এরপর আজও খুলনার বিপক্ষে মিরাজের কার্যকর ইনিংস ও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দিলেন। ব্যাট, বল, অধিনায়কত্ব তিন ডিপার্টমেন্টেই নিজেকে প্রমাণ করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

যদিও বয়সভিত্তিক দলেই মিরাজ তাঁর অধিনায়কত্বের ছাপ রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রথম অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেছিল। এছাড়া সেই সময় ব্যাট হাতেও নামতেন টপ অর্ডারে। যদিও জাতীয় দলে তাঁর ব্যাটিং টা ব্যবহার করা হয়না বললেই চলে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আট নম্বরে নেমেও সেঞ্চুরি করার রেকর্ড আছে এই অলরাউন্ডারের।

এবারের বিপিএলে বোধহয় নিজের পুরনো রূপ খুঁজে পাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাট হাতেও নিজেকে উঠিয়ে এনেছেন পাঁচ নম্বরে। ঢাকার বিপক্ষে করেছিলেন ২৫ রান। আর আজ খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে তাঁর ৩০ রানের ইনিংস ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাট হাতে লম্বা সময় পর নিজেকে প্রমাণ করছেন মিরাজ। এছাড়া তাঁর অধিনায়কত্বেও দেখা গেল দারুণ পারদর্শীতা। আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব করে দলকে টানা দুই জয় এনে দিলেন চট্টগ্রামের এই অধিনায়ক।

ওদিকে ব্যাট, বল হাতে চট্টগ্রামের বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছেন বেনি হাওয়েল। তিন ম্যাচেই ব্যাট হাতে নজর কেড়েছেন। তাঁর ঝড়ো ইনিংসে শেষ দিকে বড় সংগ্রহের দিকে হাঁটছে চট্টগ্রাম। এছাড়া দলের প্রয়োজনে কখনো হয়ে উঠছেন পেসার, অফ স্পিনার কখনো আবার লেগ স্পিনারও। আজ ঝড়ো ৩৪ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতেও নিয়েছেন এক উইকেট। চট্টগ্রামের টানা দ্বিতীয় জয়ের ম্যান অব দ্য ম্যাচ এই ইংলিশ ক্রিকেটার। বিপিএলের প্রথম পাঁচ ম্যাচ পর অবশেষে কোন বিদেশির হাতে উঠলো ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার।

এছাড়া চট্টগ্রামের তরুণ ক্রিকেটাররা যখন যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। একমাত্র আফিফই এখন পর্যন্ত বড় ইনিংসের দেখা পাননি। এছাড়া আজ বল হাতে বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই রেজাউর রহমান রাজা দারুণ বোলিং করেছেন। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের তরুণ ও বিদেশি ক্রিকেটারদের যেন এক সুতোয় গেঁথে রেখেছেন মিরাজ।

বোলার মিরাজ বাংলাদেশকে সার্ভিস দিচ্ছেন অনেকদিন ধরেই। তবে আমরা যেই অলরাউন্ডার মিরাজকে চিনতাম তিনি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন। এছাড়া মিরাজের মাঝে যে নেতৃত্ব গুন আছে সেটাও হয়তো কখনো ব্যবহার করতে চাইবে বাংলাদেশ। তাই অলরাউন্ডার ও অধিনায়ক মিরাজকে খুঁজে পাওয়া গেল তো লাভবান হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটই।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link