একাই টানলেন মুশফিক

ইনিংসের শেষের দিকে ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল মিরপুরের আকাশ; এরপর নামলো দুই বার বৃষ্টি। মুশফিকুর রহিম তখন অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রান করে। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে শঙ্কা তৈরি হলো মুশফিকের সেঞ্চুরি নিয়ে। তবে দ্রুত বৃষ্টি থেমে যাওয়াতে আবার ব্যাট করতে নামলো বাংলাদেশ। মুশফিকও দূর করলেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপ।

দলের বিপর্যয়ে অনেক বারই ত্রাতা হয়ে হাজির হয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচেও দল ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরার পর দায়িত্বশীল এক ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি এনে দিয়ে ছিলেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও মুশফিকের সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে ২৪৭ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিকের ১২৫ রানের ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি পেলেও আজও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা।

তবে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ব্যাটে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে ১৫ রান সংগ্রহ করেন এই ওপেনার। কিন্তু সেই শুরু আর ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া আঘাতে তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেন দুশমান্তা চামিরা।

চামিরার করা লেগ স্টাম্পের বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু ব্যাট মিস করে বল লাগে এই ওপেনারের প্যাডে। শ্রীলঙ্কার করা জোড়ালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। ৬ বলে ১৩ রান আসে বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে। আগের ম্যাচে ৫২ রান করেছিলেন তিনি।

তামিম প্যাভিলিয়নের পথ ধরার দুই বল পরেই রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। চামিরার মিডল স্টাম্পে করা লেংথ ডেলিভারিটি সাকিবের ব্যাট মিস করে প্যাডে লাগলে শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। লিটনের সাথে আলোচনা করে রিভিউ নেননি এই অলরাউন্ডার।

শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাংলাদেশ। আগের সাত ইনিংসে ব্যর্থ লিটন চেষ্টা করছিলেন রানে ফেরার। কিন্তু স্পিনার লাকসান সান্দাকানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। ৪২ বলে ২৫ রান করে লিটন ফিরে গেলে ভাঙে ৩৪ রানের জুটি।

লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন প্রথম ম্যাচে সুযোগ না পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে মোহাম্মদ মিঠুনের পরিবর্তে সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দিতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন তিনি। ১২ বলে ১০ রান আসে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে।

আগের ম্যাচে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে আজ এই দুজনের জুটি শুরু হয়েছিল ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর। আজও এই দুজনের ব্যাটেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪১তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও এগিয়ে যাচ্ছিলেন হাফসেঞ্চুরির পথে। যখনই তাদের জুটি জমে গিয়েছিল ঠিক তখনই সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে কুশল পেরেরার হাতে
ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ।

৫৮ বলে ৪১ রান করে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ফিরে গেলে ভাঙে ৮৭ রানের জুটি। এই জুটি ভাঙার পর দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দুটি বাউন্ডারি মেরে আত্মবিশ্বাসী শুরু করা আফিফ হোসেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন। ৮ রান করে আফিফ ফিরে যাওয়ার পর রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

মিরাজের বিদায়ের পর মুশফিকের সাথে জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অষ্টম উইকেটে দুজন যোগ করেন ৫১ বলে ৪৮ রান। সাইফউদ্দিন ২৯ বলে ১১ রান করে রান আউট হয়ে গেলে ভাঙে এই জুটি। তবে এর আগেই মুশফিক তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অষ্টম সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরির পর শ্রীলঙ্কার বোলারদের উপর তান্ডব চালান এই ব্যাটসম্যান। শেষের দিকে মুশফিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ২৪৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ১২৭ বলে দশটি চারের সাহায্যে ১২৫ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে আউট হন মুশফিক।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন সান্দাকান ও চামিরা। দুজনই তিনটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া উদানা দুটি ও হাসারাঙ্গা একটি উইকেট পেয়েছেন।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম ইনিংস শেষে)

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ: ২৪৬/১০ (ওভার: ৪৮.১; তামিম- ১৩, লিটন- ২৫, সাকিব- ০, মুশফিকুর- ১২৫, মোসাদ্দেক- ১০, মাহমুদউল্লাহ- ৪১, আফিফ- ৮, মিরাজ- ০, সাইফউদ্দিন- ১১) (সান্দাকান- ১০-০-৫৪-৩, চামিরা- ৭-২-২৭-২, হাসারাঙ্গা- ৮.৩-১-২৬-১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link