২০১৯, অক্টোবর ২৯ – জুয়াড়িদের প্রস্তাব গোপন করার অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে সাকিব আল হাসানের ওপর। এমন খবরে মুষড়ে পড়েছিল পুরো দেশের ক্রিকেটাঙ্গন, ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে সাংবাদিক কিংবা সতীর্থ সবাই একইসাথে বিস্মিত আর শোকাহত হয়েছিলেন সেদিন। আর সব কিছুর মাঝে ফুটে উঠেছিল সাকিবের প্রতি সবার নি:স্বার্থ ভালবাসা।
বছর চারেক পর, আরো একটা ২৯ অক্টোবর; বছরের একই সময়। অথচ দৃশ্য ঠিক উল্টো, সেদিনের কোটি বাঙালির প্রেমে সিক্ত সাকিব আজ অনাহূত। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর তাঁর দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, তাঁর দিকে ভেসে আসছে সমালোচনার তীব্র স্রোত।
অবশ্য ডাচদের বিপক্ষে এই ব্যর্থতা নয়, গত প্রায় মাস দুয়েকের ঘটনাপ্রবাহের কারণেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের প্রতি ধীরে ধীরে অসন্তোষ জমা হয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে; মাঠ আর মাঠের বাইরে তাঁর নানাবিধ কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি অনেকে। আর সেটারই তীব্র বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ২৮ তারিখের পর থেকে।
শুরুটা সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে; ভারতে উড়াল দেয়ার আগে একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে একসময়ের বন্ধুকে সরাসরি ছোট করে কথা বলেছিলেন তিনি। বড় টুর্নামেন্টের আগে এমন বিতর্কিত ঘটনা হয়তো পারফরম্যান্স দিয়ে ঢেকে দেবেন এমনটাই ভেবেছিলেন এই বাঁ-হাতি।
কিন্তু বিপত্তি বেঁধেছে সেখানেই, বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে প্রথম ম্যাচে হারানোর পর জিততেই ভুলে গিয়েছে টিম বাংলাদেশ। এমনকি ব্যাটে বলে সদা উজ্জ্বল সাকিবও ম্লান হয়ে আছেন এবারের আসরে। তাই তো, সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাঁকে; শুনতে হয়েছে দুয়োধ্বনিও।
কিন্তু ২০১৯ সালের দিকে তাকালে দেখা যাবে অন্য কিছু। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করা সাকিব যখন মলিন মুখ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে, চোখের জল আটকাতে সংগ্রাম করতে হয়েছিল দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের।
গত বছরের এই সময়টাও ভালোই কেটেছিল টাইগার অধিনায়কের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর নেতৃত্বে দারুণ এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৬ সালের এই মাসে বেন স্টোকসকে আউট করে মিরপুরে আইকনিক সেই স্যালুট দৃশ্যের অবতারণা করেছিলেন তিনি।
সাকিবের ক্যারিয়ারে অক্টোবর বরাবরই বসন্তের ফুল হয়ে এসেছিল, কিন্তু এবার ফুল এসেছে ঠিকই তবে বিষে ভরা। সেজন্যই ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার স্বাদ পাচ্ছেন তিনি। এই তারকা দু:স্বপ্নেও হয়তো ভাবেননি এমনটা একটা সময় তাঁর জীবনে আসবে, দিন দুয়েক আগেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নিজেকে নিয়ে। কিন্তু এক ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
নেভিল কার্ডাসের ক্রিকেট এমনই, আজ উত্থান তো কাল পতন। কিন্তু শেষবেলায় এসে হুমড়ি খেয়ে পড়া সাকিব কি আরেকবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে, নাকি গত পনেরো বছরের উজ্জ্বলতম এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে অন্ধকারেই – উত্তরটা তোলা থাকুক সময়ের হাতে।