বিশ্বকাপের আগেই কুইন্টন ডি কক ঘোষণা করে দিয়েছিলেন এই বিশ্বকাপের পর তিনি আর একদিনের ক্রিকেট খেলবেন না। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি যা জানিয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
ডি কক বলেছিলেন তিনি এখন যে বয়সে আছেন (৩০ বছর) তাতে তাঁর পক্ষে আরও কয়েকবছর ক্রিকেট খেলা সম্ভব- এই সময়টায় তিনি চাপমুক্তভাবে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ খেলতে চান। যেখান থেকে তিনি অনেক বেশি রোজগার করতে পারবেন।
যেহেতু স্পোর্টসম্যানদের ফিটনেসের কারণে পেশা থেকে অব্যহতি দিতে হয় অনেক আগে, তাই এই রোজগারের সুযোগ তিনি আর পাবেন না। এই টাকা তিনি তাঁর পরিবারের সুরক্ষার জন্য রাখবেন, এবং, দেশের হয়ে খেলার চাপ না থাকলে তিনি পরিবারের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারবেন, পরিবারই তাঁর প্রথম প্রায়োরিটি।
বিশ্বকাপের আগে, এই অবসর নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও বেশি উতলা হয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় দর্শকেরা। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী’র পাশে থাকার জন্য বিরাট কোহলি কিংবা সাকিব আল হাসান বা লিটন দাস দেশে ফিরে আসায় যাঁরা তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের থেকে কুইন্টনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া সহজ নয়।
একজন ক্রিকেটার প্রকাশ্যে বলছেন দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দিতে চান বেশি টাকা রোজগারের আশায়- এ তো দেশপ্রেমের আবেগের আগুনে ঘি ঢালা! কুইন্টন বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক তিনদিন পর, আরও একটি বিবৃতিতে জানান, দেশের হয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ পারফরমেন্স তিনি দেওয়ার চেষ্টা করবেন এই বিশ্বকাপে।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের পর কুইন্টনের এই বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল। এর আগে এক বিশ্বকাপে চার সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে মাত্র দু’জনের। কুমার সাঙ্গাকারা (২০১৫) এবং রোহিত শর্মা (২০১৯)। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন তিনিই।
সামগ্রিক বিশ্বকাপের ইতিহাসের নিরিখে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকার, ৬৭৩ রান তিনি করেছিলেন ২০০৩ সালে। আর মাত্র ১২৮ রান করলেই কুইন্টন এ রেকর্ডটিও ভেঙে দেবেন। তাঁর হাতে রয়েছে অন্তত আরও তিনটি ম্যাচ।
বিশ্বকাপের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটিং পারফরমেন্সের দিকে এগোচ্ছেন ডি কক।কুইন্টন ডি কক এই বিশ্বকাপের পর আর ওয়ানডে খেলবেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ জিতবে কি না জানে না কেউ।
কিন্তু, আমরা যাঁরা উপমহাদেশে এখনও পরিবারকে হায়েস্ট প্রায়োরিটি দেওয়ার মতো বিষয়কে স্বাভাবিক করতে পারি না, দেশপ্রেমের একটি ছকে বাঁধা রুলবুক ঝুলিয়ে রাখি সর্বদা, বৃদ্ধ-পড়তি ফর্ম-টেনেটুনে দলে থাকার পরিস্থিতি না আসা অবধি তারকাদের অবসর কল্পনাই করতে পারি না- আমাদের সবার মুখে সপাটে জবাব দিচ্ছেন কুইন্টন ডি কক।
তিনি বিশ্বকাপ শুরুর সময় বলেছিলেন দেশকে এইবার কাপ জেতানোর জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে শ্রেষ্ঠ খেলাটা খেলতে চান- তিনি সেটাই খেলছেন। নিজের টপফর্মে থেকে খেলাকে আলবিদা জানানোর দম সকলের থাকে না। কুইন্টনের আছে। ষোলো আনা আছে।