এশিয়ার দলগুলো বিশ্বকাপে আধিপত্য দেখাতে পারছে না কেন?

এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ। তবে চেনা কন্ডিশনে জ্বলে উঠতে পারছে না এশিয়ার দলগুলোই। এখন পর্যন্ত সেরা চারের দৌড়ে আধিপত্য দেখাচ্ছে এশিয়ার বাইরের দলগুলো। এরই মধ্যে বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পথ ধরে শ্রীলঙ্কাও রয়েছে বাদ পড়াদের তালিকাতেই। আর পাকিস্তানের সেমি স্বপ্ন এখন পর্যন্ত টিকে থাকলেও তার জন্য তাদের পেরোতে হবে কঠিন সব সমীকরণ।

ভারত বিশ্বকাপে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আছে ভারতই। এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে এই ভারতই একমাত্র দল হিসেবে সবার আগে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আফগানিস্তান অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে চমক দেখিয়েছে। বেশ ভালোভাবেই তাঁরা রয়েছে সেমির দৌড়ে। তবে এ দুই দল বাদে বাকি তিন দলের এবারের বিশ্বকাপের গল্পটা ব্যর্থতাতেই মোড়ানো।

অবশ্য আগের দুই বিশ্বকাপেও ভারত বাদে এশিয়ার কোনো দলই সেমিফাইনালে পা রাখতে পারেনি। আইসিসি’র টুর্নামেন্ট বিবেচনায় সর্বশেষ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আধিপত্য দেখিয়েছিল এশিয়ার দলগুলো। সেবার ৪ সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৩ টা দলই ছিল এশিয়ার। আর ফাইনালটা হয়েছিল অল এশিয়ান ফাইনাল, ভারত-পাকিস্তান মহারণে।

তবে এরপর থেকে আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে তেমন আধিপত্য বিস্তার করতে পারছে না এশিয়ার দলগুলো। শেষ এক দশকে কোনো শিরোপা না জিতলেও ভারতই এ সময়কালে একমাত্র ধারাবাহিক ছিল। এ ছাড়া কোনো দলই তেমন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। অথচ ২০০০ সালের পরের এক দশকে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্যের পর বলতে গেলে এশিয়ার দলগুলোই আধিপত্য দেখিয়েছে।

২০০৭ আর ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। দুই আসরেই হয়েছিল অল এশিয়ান ফাইনাল। প্রথম বারের পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ভারত। আর দ্বিতীয় আসরের শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও দেখা গিয়েছিল দুই এশিয়ান পরাশক্তি শ্রীলঙ্কা আর ভারতের লড়াই। কিন্তু এরপর থেকেই যেন ক্রিকেট মানচিত্রে আধিপত্য বিস্তার করছে এশিয়ার বাইরের দলগুলো।

২০১১ এর পর ২০২৩ বিশ্বকাপে এশিয়ার মাটিতে হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিল নজর কাড়বে এশিয়ার দলগুলোই। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে রাঙাচ্ছে অন্য দলগুলোই। হঠাৎ এশিয়ার দলগুলোর এমন অসহায়ত্বের কারণ কি? অনেকেই মনে করছেন, এশিয়া দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সেই সংঘবদ্ধতা নেই। পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ছাড়া সিরিজে খেলতে বরাবরই অনীহা দেখিয়েছে অন্য দলগুলো। কূটনৈতিক বৈরিতায় পাকিস্তানের মাটিতেও খেলতে চায় না ভারতও।

শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী দেশ হিসেবেও ভারতে সিরিজ খেলার সুযোগ পায় না বাংলাদেশ। একই ভাবে, পাকিস্তানেরও ভারত সফর বন্ধ হয়ে আছে অনেক দিন ধরে। এই বিশ্বকাপ দিয়েই ৮ বছর পর আবারো ভারতের মাটিতে খেলতে এসেছে পাকিস্তান। মূলত, এমন অনভ্যস্ততার কারণেই এবারের বিশ্বকাপে ভাল করতে পারছে না এশিয়ার দলগুলো। যদিও দিনশেষে এটি অজুহাত হিসেবেই গণ্য হবে।

ভারতের বিপক্ষে এশিয়ার বাকি দলগুলোর মধ্যে লড়াইয়েও এবার পরিলক্ষিত হয়েছে আকাশসম ব্যবধান।  শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে মাত্র ৫৫ রানে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানও নিজেদের সংগ্রহ ২০০ টপকাতে পারেনি। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান যদিওবা নিজেদের সংগ্রহ ২০০ ছাড়িয়েছে, তবে ভারত সেই লক্ষ্য টপকে গেছে অনায়াসেই।

মোদ্দা কথা, ভারতের ক্রিকেট দল যতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, সময়ের ব্যবধানে এশিয়ার বাকি দলগুলো সেভাবে তাল মিলিয়ে উঠতে পারেনি। আর এ কারণেই বৈশ্বিক আসরে ভারত সফল হলেও ব্যর্থতার ডুব সাগরে পতিত হচ্ছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলো।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link