সব প্রত্যাবর্তন হয়না সুখকর

এক বিশ্বকাপ দিয়েই ইংল্যান্ডের হয়ে ‘সব’ টা জিতে নিয়েছিলেন বেন স্টোকস। এরপর তো অর্জনের পালকে তো যুক্ত হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটও। দুই ফরম্যাটের দুই বিশ্বকাপ জিতে তাই ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসেরই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বনে গিয়েছিলেন স্টোকস। ‘সব পাওয়া’র পূর্ণতাতেই কিনা ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। অবসরের ঘোষণাও দিয়ে দেন ঘটা করে।

তবে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর আরেকটি বিশ্বকাপ যখন দোরগড়ায়, তখন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলার অনুরোধ করে বসলেন স্টোকসকে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বমঞ্চে খেলার লোভটা সংবরণ করতে পারলেন না স্টোকসও। অবসর ভেঙে আবারো ফিরে এলেন ওয়ানডে ক্রিকেটে। কিন্তু সব ফেরা তো আর স্মরণীয় হয় না।

৪ বছর আগে যিনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সুখস্মৃতির অংশ হয়েছিলেন, সেই তিনি এবার বিশ্বকাপ পার করছেন ইনজুরি আর দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সকে সঙ্গী করছেন। দল হারের বৃত্তে বন্দী। স্টোকসও কখনো বন্দী চোটে, কখনও বা আবার নিজের ব্যাটিং দুর্দশায়। দুইয়ের মিশেলে ইংল্যান্ড দলটারও ঠাই হয়েছে তলানিতে।

বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচ গুলোতে ছিলেন না স্টোকস। যখন ফিরেছেন, তখন দলের চরম সংকটাপন্ন অবস্থা। ইংল্যান্ড দলের ভাগ্য ফেরাবেন এই অলরাউন্ডার, ঠিক এমন সম্ভাব্যতায় প্রহর গুণছিল ইংলিশ সমর্থকরা। তবে সেই সম্ভাবনা মিলিয়ে গেছে স্টোকসের অপ্রত্যাশিত অফফর্মে। শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলবেন, এটাই আগে থেকে জানা গিয়েছিল।

তবে ব্যাটার হিসেবে এবারের বিশ্বকাপে রীতিমত স্ট্রাগল করছেন স্টোকস। আগ্রাসী, আক্রমণাত্বক স্টোকসের ছিটেফোঁটাও মেলেনি এবারের আসরে। ভারতের বিপক্ষে শূন্য রানে ফিরেছিলেন। তার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে চল্লিশ পেরিয়েছিলেন। কিন্তু বল হজম করেছিলেন ৭৪ টা। রয়েশয়ে ব্যাটিং করেও সেট হয়ে উইকেট খুইয়েছেন, ইংল্যান্ডও ম্যাচ খুইয়েছে সেখানেই।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। মন্থর গতিতে ব্যাটিং করলেও পরে তা পুষিয়ে দেবেন, এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। অবশ্য কেউই তাঁকে সঙ্গ দেয়নি। নি:সঙ্গ একটা লড়াই চালিয়েছিলেন। নি:সঙ্গ লড়াইয়েই স্টোকস হয়ে ওঠেন আরো দুর্দান্ত। লর্ডস থেকে হেডিং কিংবা পুরো বিশ্ব- সবাই সেটা জানে।

তবে এবারের লড়াইটা আর বিজয়ের গল্প রচনা করতে পারলো না। ৯০ বলে ৬৪ রান আউট হয়ে যান স্টোকস। অজিদের বিপক্ষে ইংলিশদের ম্যাচ জয়ের আশার প্রদীপটাও নিভে যায় সেখানে।

বিশ্বকাপে নিজের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরির দিনে হারের তিক্ত স্বাদ নিলেন স্টোকস। এটা নতুন কিছু নয়। ২০১৯ বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কা আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফিফটি করেও ছিলেন বিজীতদের দলে। তবে এমন মন্থর ইনিংস, শেষ কবেই বা দেখা গিয়েছে স্টোকসের ব্যাট থেকে! দৃষ্টিকটু ব্যাপারটা যে লুকিয়ে সেখানেই।

বেন স্টোকস যখন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন, তখন আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছিল এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। যখন তিনি অবসর ভেঙে ফিরলেন, তখনও স্বাগত সুর ছিল সবার কণ্ঠে। কিন্তু সব সময় প্রত্যাশার সাথে সব কিছু মিলে নায়। হতাশাও যুক্ত হয় স্মৃতির খাতায়। বেন স্টোকস সেই বাইশ গজের হতাশার বেড়াজালেই আপাতত বন্দী।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link