ইব্রাহিম জাদরান, ‘লা জবাব’ আফগান

২০১৫, ‘১৯, ‘২৩ টানা তিনটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছে আফগানিস্তান। অভিষেক আসরে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল তাঁরা, মাঝে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভাল করতে না পারলেও চলতি আসরে ঠিকই নিজেদের জাত চিনিয়েছে আফগানরা; বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে হারিয়েছে, সবমিলিয়ে আট ম্যাচে তাঁদের জয়ের সংখ্যা চারটি।

কিন্তু এত উত্থান, পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও একটা আক্ষেপ রয়েই গিয়েছিল মোহাম্মদ নবী, রশিদ খানদের। বৈশ্বিক মঞ্চে দলটির কোন ব্যাটসম্যানই পারেননি হেলমেট খুলে উদযাপন করতে। দীর্ঘ সময়ের সেই আক্ষেপ অবশেষে মিটেছে, ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় যজ্ঞে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান।

শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১২৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস এসেছে তাঁর কাছ থেকে। ওপেনিংয়ে নেমে অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত, দলকে এনে দিয়েছেন ৩০০ ছুঁই ছুঁই সংগ্রহ।

শুরুটা বরাবরের মতই দেখেশুনে করেছিলেন ইব্রাহিম, সঙ্গী রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারালেও অজি পেসারদের বিপক্ষে দারুণ সাবলীল ছিলেন তিনি। নিয়মিত প্রান্ত বদল আর বাউন্ডারির সাহায্যে মাত্র ৬২ বলেই অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি।

কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগেননি, অহেতুক ঝুঁকি নেননি। বরং ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছেন। অন্যপ্রান্তে অবশ্য ৩০ রান করে অভিজ্ঞ রহমত শাহ আউট হয়েছেন; ক্যাপ্টেন শহিদী, নবী কিংবা তরুণ আজমতউল্লাহ কেউই পারেননি বেশিক্ষণ তাঁকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে ঠিকই হাল ধরে রেখেছেন এই ডানহাতি।

ক্রমাগত উইকেট পড়ায় কিছুটা খোলসে ঢুকতে হয়েছিল তাঁকে, তাই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে সময় লেগেছে অনেকটা। শেষমেশ ৪৪তম ওভারের শেষ বলে এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, কভারের দিকে ঠেলে দিয়ে দৌড়ে সিঙ্গেল নিয়েছেন আর তাতেই ইতিহাস সৃষ্টি হয় ওয়াংখেড়েতে।

১৩১ বলে শতক হাঁকানো জাদরান ডেথ ওভারে ঠিকই আবার রান করেছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। পরের ১২ বলেই স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন ২৮ রান। তাঁর এই দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ভর করেই বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের কীর্তি নতুন করে লিখেছে আফগানিস্তান।

পাকিস্তানের বিপক্ষেও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেদিন ১৪ রান দূরে থাকতে থেমে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেই অতৃপ্তি থেকেই হয়তো আরো ভাল করার জ্বালানি পেয়েছেন এই ব্যাটসম্যান, জ্বালানি পেয়েছেন অজি দম্ভের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করার।

স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারদের বিপক্ষে আফগানিস্তান জিতবে কি না সেটা সময়ই বলে দিবে। জিতে গেলে নিঃসন্দেহে ইব্রাহিম জাদরান হবেন ম্যাচের নায়ক; হেরে গেলেও তাঁকে মনে রাখতে হবে। কেননা প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে, নতুন দিগন্তের দিশারী হিসেবে আফগান ক্রিকেট অধ্যায়ে চিরউজ্জ্বল থাকবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link