পেস বোলিং কোচ ডোনাল্ড আদৌ কতটা সফল ছিলেন?

বিশ্বকাপ শেষে অ্যালান ডোনাল্ড চুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন না, এটা শোনা যাচ্ছিল আগে থেকেই। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়েছে। সেই সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথেও ইতি ঘটলো ডোনাল্ডের সম্পর্ক। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগেই দলের খেলোয়াড়দের ‘বিদায়’ বলে দিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যা হয়েছে, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশের ‘পেস বোলিং কোচ’ হিসেবে দেড় বছরের কার্যকাল শেষ হলো ডোনাল্ডের।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময়কালে পেস বোলিং কোচ হিসেবে কতটা সফল ছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড? চারদিক থেকে এই কোচের বিদায় বেলায় যে প্রশংসার জোয়ার বইছে, তার সবটা কি ডোনাল্ডের কর্মদক্ষতার ফল নাকি বাউন্ডারি লাইন থেকে পেসারদের অনুপ্রাণিত করার সচিত্র চিত্রায়ণে আবেগ খুঁজে নেওয়া? প্রথমত, পেস বোলিং কোচ হিসেবে অ্যালান ডোনাল্ড সময় পেয়েছেন দেড় বছরের কিছুটা বেশি, ২০ মাসের মতো। পেসারদের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এই সময়টা কমই বটে।

তবে স্বল্প সময়েই পেসাররা কেমন পারফর্ম করেছেন, সেটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। এ সময়কালে দুটি আইসিসির টুর্নামেন্ট পেয়েছেন ডোনাল্ড। একটি ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, অন্যটি ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাস্তবতা বলে, ডোনাল্ডের অধীনে এই দুই টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশি পেসাররা ছিলেন বিবর্ণ।

কতটা বিবর্ণ তার প্রমাণ মিলে এবারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সেই। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দল গুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের পরই সবচেয়ে কম ২৬ টি উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশের পেসাররা। অর্থাৎ উইকেটের দিক দিয়ে বাংলাদেশি পেসারদের এই টুর্নামেন্টে অবস্থান। উইকেট খরার হিসাব বাইরে রাখলেও বোলিং গড় কিংবা স্ট্রাইক রেট, দুটিতেই বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশি পেসারদের বোলিং গড় প্রায় ৫১ এর কাছাকাছি, ৫০.৯২। বোলিং গড় বিবেচনায় যা এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড়ের রেকর্ড। বাকি ৯ দেশের মধ্যে শুধু আফগান পেসারদেরই ৪০ এর উপরে বোলিং গড়। এ ছাড়া বাকি ৮ দলের পেসাররাই ৪০ এর নিচে বোলিং গড় রেখে বল করেছে।

পেসারদের ইকোনমির দিক দিয়েও বাংলাদেশি পেসারদের ঠাই হয়েছে প্রায় তলানির দিকে। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ইকোনমি রেটে বল করেছে শুধু শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তান। আর বোলিং স্ট্রাইকরেটের দিক দিয়ে ১০ দলের মধ্যে সবচেয়ে বাজে স্ট্রাইকরেট আবার বাংলাদেশি পেসারদেরই। এ বারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশি পেসাররা প্রতি উইকেট শিকারের পিছনে খরচ করেছে ৪৮ টি বল।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও টাইগার পেসারদের চিত্রটা সুখকর নয়। ১৬ দলের সে বিশ্বকাপে উইকেট নেওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০ নম্বরে। সব মিলিয়ে সে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে ছিল জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়। যে দুটি জয় অনুমিতই ছিল। তাই বলাই বাহুল্য, ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পেসাররা ব্যবধান গড়ে দেওয়ার মতো তেমন পারফর্ম্যান্স করে দেখাতে পারেনি।

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড। ২০ মাসের এ সময়কালে ডোনাল্ড নিয়ে প্রচলিত জনপ্রিয় কথাটি হচ্ছে, তিনি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুর্দান্ত। তবে সময়স্বল্পতার কারণে বৈশ্বিক আসরে সফল হতে পারছেন না। সময় স্বল্পতার দায়টা অনেকাংশেই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বিশ্বকাপের আগেও যে ডোনাল্ড খুব বেশি সফল ছিলেন, এমনটিও বলার উপায় নেই।

পরিসংখ্যান বলছে, ডোনাল্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উইকেটের দিক দিয়ে বাংলাদেশি পেসারদের অবস্থান ৮ নম্বরে। অথচ এই সময়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে খেলা শীর্ষ ৫ দলের মধ্যে একটি দল ছিল বাংলাদেশ।  শীর্ষ স্থানীয় দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডের পেসাররাই শুধু পিছিয়ে আছে। ইংল্যান্ড পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের চেয়ে ৮ টি ম্যাচ কম খেলেছে ইংলিশ পেসাররা।

সার্বিক বিবেচনায় অ্যালান ডোনাল্ডকে পেস বোলিং কোচ হিসেবে আর যাই হোক ‘সফল’-দের কাতারে রাখা যায় না। গড়পড়তা কাজ করেছেন। পেসারদের থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু সাফল্য পেয়েছেন। এই অংশ বাদ দিলে সিংহভাগ অংশটাই ব্যর্থতায় ঘেরা।

তবে, এটাও সত্য যে, পেসারদের নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি সময়ও তেমন একটা পাননি। তবে ডোনাল্ডকে ‘সফল’ কোচ হিসেবে যে জনপ্রিয় কথা ছড়িয়ে পড়ছে, তার সিংহভাগই ভিত্তিহীন, আবেগপ্রসূত। বাস্তবতা বলে, বলার মতো তেমন কোনো সফলতা নেই ডোনাল্ডের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link