শুভ্রতায় শান্ত শুনিয়ে গেলেন শতকের গান

‘ক্যাপ্টেন্স নক’ নাজমুল হোসেন শান্তর ইনিংসকে এর থেকে ভালভাবে সম্ভবত বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নতুন দিনের আশার আলো হয়ে জ্বলছেন তিনি। হাতে তুলে নিয়েছেন দিন বদলের মশাল। অধিনায়কত্বের দায়িত্বটায় দমে যাননি তিনি। হননি খোলস বন্দী। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে পেলেন সেঞ্চুরির দেখা।

ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করবার মর্যাদা নিশ্চয়ই শব্দজালে বন্দী হবার নয়। সেই উৎকণ্ঠা নিয়ে শান্ত নেমেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সাম্প্রতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ধারাবাহিক দলটার বিপক্ষে নড়বড়ে এক দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা তো ভীষণ চাপের।

সেই চাপকে দূরে ঠেলে দিয়ে শান্ত অবশ্য প্রথম ইনিংসে শুরুটা ভালই করেছিলেন। এজাজ প্যাটেলদের বাউন্ডারি ছাড়া করে মনোবলে আঘাত করেছিলেন। তবে হতাশার এক নাম হয়েই শান্ত প্রথম দিন গিয়েছিলেন প্যাভিলিয়নে। গ্লেন ফিলিপসের ফুলটস বলটায় ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন তিনি।

চারিদিকে সমালোচনার বাতাস ঘনীভূত হতে শুরু করেছিল। তবে সেটা খানিক সময়ের জন্য প্রতিহত করে রেখেছিলেন নিজের অধিনায়কত্ব দিয়ে। সঠিক সময়ে বোলারদের পরিবর্তন। ঠিকঠাক জায়গায় ফিল্ডারদের সাজিয়ে নিউজিল্যান্ডকে করেছিলেন কোণঠাসা।

ফায়দাও পেয়েছে দল তাতে। মাত্র ৩১৭ রানেই প্যাভিলিয়নে পাঠানো গেছে গোটা নিউজিল্যান্ড দলকে। এরপর অবশ্য শান্তকে সেই ব্যাট হাতেই নিজেকে প্রমাণ করতে হতো। তৃতীয় দিন এসে দেখা মিলল ধারাবাহিক শান্তর আসল রুপ। এদিন বাড়তি কোন ঝুঁকি নেননি। অহেতুক কোন শট খেলেননি। রান করেছেন ধীর লয়ে। নিজের উইকেটে মূল্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের যথার্থ জবাব দিয়েছেন রিভার্স সুইপে। জেমিসনদের আগ্রসনের বিপক্ষে ব্যাট হাতে করেছেন সলিড ডিফেন্স। প্রতিটা বলের মেরিট বুঝে খেলেছেন তিনি। সম্মান করেছেন ভাল বলগুলোর। তাতেই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের একটা স্থান তৈরি করে ফেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

অধিনায়ক হিসেবে নিজের অভিষেক টেস্টে সর্বোচ্চ মালিক এখন তিনি। ২০০৯ সালে অধিনায়ক হিসেবে ১১২ রান করেছিলেন সাকিব আল হাসান। এতদিন সাদা পোশাকে অধিনাকত্বের শুরুতে সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। সেই রান টপকে গেছেন শান্ত। লিখেছেন নতুন ইতিহাস।

সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছেন নিজের বনেদী ফরম্যাটের অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার। টানা দুই টেস্টে তিন সেঞ্চুরি এলো তার ব্যাট থেকে। ধারাবাহিক ঠিক কি করে হতে হয় সেটিই দেখিয়েছেন শান্ত। গোধূলি লগ্নের বিস্ময় ছাপিয়ে সবুজে ঘেরা সিলেটে লিখেছেন নিজস্ব কাব্য।

যদিও দুই সতীর্থকে আউট করবার একটা গ্লানি রয়েছে তার। তার করা স্ট্রেইট ড্রাইভে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন আগের ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল হাসান জয়। দারুণ খেলতে থাকা মুমিনুল হকও ফিরেছেন শান্তর সাথে ভুল বোঝাবুঝির বলি হয়ে। তবে সেসব এক লহমায় ভাসিয়ে দিলেন সুরমা নদীতে।

সতেজ অক্সিজেনে ভরে নিলেন নিজের ফুসফুস। এ যেন এক নতুন শুরু। এক নতুন দিনের গল্প লিখবেন বলেই প্রত্যয়ী নয়া অধিনায়ক। সমালোচনা আর ট্রল ছাপিয়ে জায়গা করেছেন দর্শকদের হৃদয়ে। সিলেটের গুটিকতক দর্শকও তাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ধ্বনিত করেছে, ‘শান্ত, শান্ত’ বলে। এই জয়ধ্বনি চলতে থাকুক। শান্তর হাতেই লেখা হোক নিত্যনতুন ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link