সৌম্য সরকার কেন দলে? এই প্রশ্ন মনে জাগেনি এমন ক্রিকেট ভক্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বেলে বিশ্ব দরবারে পদযাত্রার শুরু সৌম্যর। তবে সেই প্রদীপ দপ করেই যেন নিভে গেছে। যতটুকু প্রত্যাশা ছিল তার প্রতি, তার চার আনাও যেন পূরণ করতে পারেননি তিনি।
লম্বা সময় ধরেই জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। হুট করেই সেই সৌম্য ধরেছেন নিউজিল্যান্ডের বিমান। সেখানে পৌঁছেও গেছেন তিনি। অবশ্য বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন সৌম্য। ধারণা করা হচ্ছিল আগের দুই বিশ্বকাপের মতই সৌম্য সুযোগ পেয়ে যাবেন দলে।
তবে তেমনটি হয়নি। তাকে ছাড়াই দল বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে। পেছনে কারণও রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পাওয়া দুই ম্যাচেও নজরে আসার মত কিছু করতে পারেননি। যদিও একটি ম্যাচ বৃষ্টির জলে ভেসে গিয়েছিল। পরবর্তী সুযোগে শূন্য রানে ফিরেছিলেন প্যাভিলিয়নে। এমন পারফরমেন্সের জোরে অন্তত বিশ্বকাপের দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যায় না।
তাছাড়া ইমার্জিং এশিয়া কাপেও আমলে নেওয়ার মত পারফরমেন্স ছিল না সৌম্যর। সে সব বিচারে নিউজিল্যান্ডগামী দলের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিনি দলে থাকা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একজন। এমনকি পরিসংখ্যানগত ভাবে সফলদের একজন।
তবে সেই সফলতার মাপকাঠি অবশ্য উচ্চাভিলাষী কিছু নয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিম স্রেফ এগিয়ে রয়েছেন অভিজ্ঞতা আর পরিসংখ্যান বিচারে। মুশফিকুর রহিম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৩৪৩, গড়টা ২৬ এর একটু বেশি।
অন্যদিকে, সৌম্য সরকার নয় ম্যাচ খেলেছেন কিউইদের আস্তানায়। সেখানে মাত্র ১৫.৪৪ গড়ে ১৩৯ রান করেছেন বাম-হাতি এই ব্যাটার। অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে এই মুহূর্তে দলে তার থেকে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই। তিনি আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন নিউজিল্যান্ডে।
প্রায় ১৫৪ স্ট্রাইকরেটে ১৭৪ রান করেছেন সৌম্য সরকার। যা আবার ব্ল্যাকক্যাপসদের মাটিতে বাংলাদেশি ব্যাটারদের সংগ্রহ করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। সামান্য সফলতাই প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে সৌম্য সরকারকে দলে সংযুক্ত করতে।
এছাড়াও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে বহুদিন বাদে রানের ধারায় ফিরেছিলেন সৌম্য। সেটার পুরষ্কার হিসেবেও হয়ত সৌম্যকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ছয় ম্যাচে ১১ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন সৌম্য। ৪৮.৪৪ গড়ে ৪৩৬ রান করেছেন তিনি। চারটি হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেঞ্চুরির দেখা পাননি একটি বারের জন্যও।
এর পেছনে ভিন্ন এক কারণও রয়েছে। সৌম্য সরকার নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন। পুরোদস্তুর একজন ব্যাটারের পরিবর্তে একজন অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এবারের এনসিএলে তিনি ১৭টি উইকেট শিকার করেছেন। মিডিয়াম পেস বোলিং তিনি খুব একটা মন্দ করেন না।
সেটাও সৌম্যর দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। সৌম্য সরকারের উপরে আরও একবার ভরসা করতে চেয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। নিউজিল্যান্ডের পেস সহায়ক উইকেটে ব্যাটার সৌম্য হতে পারেন কার্যকর। তাছাড়া বল হাতেও খানিকটা কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন তিনি। সময় বলে দেবে প্রত্যাশার ঠিক কতটুকু পূরণ করতে পারবেন তিনি।