বয়স ২৯ পেরিয়েছে চলতি বছরেই। পরের বিশ্বকাপে বয়স গিয়ে ঠেকবে ৩৩-এ। যে বয়সে অনেকেই ক্রিকেটারই চলে যান বাদ পড়াদের তালিকায়। অমিত প্রতিভা থাকা স্বত্ত্বেও সাঞ্জু স্যামসনও কি সেই পথে হাটছেন? এ যেন প্রতিভার নিদারুণ অপব্যবহার। ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। তাঁর জায়গায় ঋষাভ পান্ত এসেছেন বটে। তবে ইনজুরির কারণে তিনিও যখন ছিটকে গেলেন, তখনও যেন লাইমলাইটে উচ্চারিত হলো না সাঞ্জু স্যামসনের নাম।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের অতি পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভারতের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৫ টা ওয়ানডেতে। সংক্ষিপ্ত এই ক্যারিয়ারে আবার ভিন্ন ভিন্ন সিরিজ খেলতে ৬ টা দেশ ছুটতে হয়েছে স্যামসনকে। ভিন্ন কন্ডিশন। অসম চাপ কিংবা বাদ পড়ার আশঙ্কাতেই প্রায় প্রতি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। তারপরও গড় ধরে রেখেছেন পঞ্চাশের উপরে। সাথে স্ট্রাইকরেটও পেরিয়েছে ১০০। যখনই সুযোগ পান ভারতের ‘ব্যাক-আপ’ দলে তখনই পারফরম করেন, এবার যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাতেও করলেন সেঞ্চুরি।
কিন্তু এরপরেও যেন আসা যাওয়ার দোলাচলেই থাকেন এ ক্রিকেটার। নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন স্যামসন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, পারফর্ম করেছেন। তাঁর প্রতিভা নিয়েও কারোর প্রশ্ন নেই। বরং তাঁকেই অনেকে ভারতের ভবিষ্যৎ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু তা আর হচ্ছে কোথায়? একমাত্র মূল দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতেই তাঁর সুযোগ মেলে।
সাঞ্জু স্যামসন সাধারণত টপ অর্ডারেই ব্যাট করে থাকেন। তবে দলের প্রয়োজনে তাঁকে মিডল অর্ডার ব্যাটারের ভূমিকাতেও দেখা যায়। ভারতের হয়ে এই অর্ডারেই তিনি সিংহভাগ ম্যাচ খেলেছেন। তবে তিনি যে পিঞ্চ হিটার হিসেবেও ভারতের হয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেই ভাবনাটাই আসেনি ম্যানেজমেন্টের মাথায়।
অবশ্য রিঙ্কু সিংয়ের কারণে এই পজিশনে তাঁর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাটাও ছিল ক্ষীণ। তবে স্যামসন যেন নিজের পজিশনেই কখনো থিতু হতে পারেননি। ঠিক যেন জাতীয় দলের মতোই। এই সুযোগ আসে তো, পরক্ষণেই হারিয়ে ফেলেন। বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ৪১ বলে ৫১ রান করেছিলেন তিনি। চার নম্বরে দারুণ সফল হলেও তারকাদের ভীড়ে বিশ্বকাপে জায়গা পাননি। সেটা অনুমেয়ই অবশ্য ছিল।
কিন্তু প্রোটিয়া সফরে যখন কোহলি, রোহিত, রাহুল নেই, তখন তিনি সুযোগ পেলেন বটে। কিন্তু পজিশন বদলে হয়ে গেল পাঁচ। মিডল অর্ডারে অবশ্য এই সামান্য রদবদল কোনো তারতম্য ঘটানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে না। তবে স্যামসনকে নিয়ে এই টানা হেঁচড়া যেন তাঁর প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের অনীহায় প্রকাশ করে দিচ্ছে।
স্যামসনের ক্যারিয়ার সামনে কতদূর এগোবে, সেটি সময়ই বলে দিবে। তবে এই ক্রিকেটার আক্ষেপ করতেই পারেন এই ভেবে, বড্ড ভুল সময়ে তিনি এসেছেন ভারতের ক্রিকেট পাড়ায়।