উত্থান-পতনের যেন আরেক নাম পাকিস্তান ক্রিকেট। দেশটির ক্রিকেটের উত্থান গল্পে যেমন চারদিকে জয়ধ্বনি হয়, তেমনি তাদের অবনমনে মেলে তার চেয়েও বেশি দুয়োধ্বনি। চলতি বছরটাও তার ব্যতিক্রম নয়। বরাবরের মতোই বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট। তবে এবার মাঠের পাকিস্তানের চেয়ে যেন মাঠের বাইরের পাকিস্তানই বেশি আলোচনায় এসেছে।
বছরের শুরুটা হয়েছিল পিসিবির নেতৃত্ব বদলের ঘটনায়। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালেন। সেই সাথে পিসিবি মসনদের জায়গাটাও হারান রমিজ রাজা। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রমিজের জায়গায় বসেন নাজাম শেঠি। এরপর বছর না ঘুরতেই, আবারো পিসিবিতে পরিবর্তন। এবার জাকা আশরাফের আগমন। ফলত, পিসিবি প্রধান হিসেবে বিদায় ঘন্টা বেজে যায় নাজাম শেঠির। অর্থাৎ শেষ ১ বছরে তিন বার পিসিবির সর্বোচ্চ আসনের জায়গা পরিবর্তিত হয়েছে।
বছরের শুরুর মতো শেষটাও হয়েছে আরেকটি পরিবর্তনের মাধ্যমে। পাকিস্তানের তিন সংস্করণের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বাবর আজম। তাঁর জায়গা নেতৃত্বে আসেন তিন জন; টেস্টে শান মাসুদ, ওয়ানডেতে মোহাম্মদ রিজওয়ান আর টি-টোয়েন্টি শাহীন শাহ আফ্রিদি। বাবর এমন সরে দাঁড়ানোর পিছনে রয়েছে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ভরাডুবি। মাত্র ৪ ম্যাচ জয়ে ভারত বিশ্বকাপে শেষ পর্যন্ত সেমি নিশ্চিত করতে পারেনি পাকিস্তান।
বিশ্বকাপে এমন ব্যর্থতার পরই বাবরের দিকে ধেয়ে আসে নানান সমালোচনা। এমন সমালোচনার ভিতরে অবশ্য আগেও গিয়েছেন। তবে এশিয়া কাপ ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপেও একই চিত্র, শেষ পর্যন্ত বাবরকে নেতৃত্ব থেকেই সরে যেতে বাধ্য করে। অবশ্য বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান যে পুরোনো ছন্দে ফিরেছে, তা নয়। অজি সফরের প্রথম টেস্টেই তাঁরা হেরে যায় ৩৬০ রানে।
বিশ্বকাপের পর বাবর সরে গেলেও তাঁর হাত ধরেই আবার এ বছরে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে উঠেছিল পাকিস্তান। এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত পাকিস্তান এক প্রকার অপরাজেয় দলই হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপ, টানা দুই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সেই আগ্রাসী আঁচটা আর পাওয়া যায়নি। তাই র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দল হয়েও বছরের শেষ অর্ধে হতাশার গল্পই লিখতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ছাড়াও এ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গী হয়েছে আরেক হতাশা। এর আগে কখনোই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারার দুঃস্মৃতি ছিল না পাকিস্তানের। তবে এ বছরেই আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হেরে যায় পাকিস্তান। যদিও সে দলটিতে পাকিস্তানের নিয়মিত খেলোয়াড় না থাকায় সিরিজের পর তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কম।
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান দলে পরিবর্তন হয়েছিল আরো বেশ কয়েকটি জায়গায়। অধিনায়ক থেকে শুরু করে কোচ এবং নির্বাচক প্যানেলও পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে আবার হারিস রউফকে টেস্ট খেলানোর ইস্যুতে সরগরম হয়েছিল প্রধান নির্বাচক ওয়াহাব রিয়াজ-পেসার রউফ দ্বন্দ্বের বিষয়টি। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটে যে পরিবর্তনের আভাস, তা মাঠের খেলায় ফুটে না উঠলেও আসন্ন বছরের জন্য আশাবাদী পিসিবি। এখন দেখার পালা, নতুন বছর শুধু উত্থানের গল্পেই তাঁরা রাঙাতে পারে কিনা।