অধিনায়কত্বের ভারেই যেন নুইয়ে পড়ছিলেন বাবর আজম। পাকিস্তান ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে স্রেফ মাঠের ক্রিকেট সামাল দিলেই হয় না। সেখানে সামাল দিতে হয় সমালোচনা। অধিনায়ক হিসেবে মাথায় রাখতে হয় বোর্ড কর্তাদের রুদ্রচক্ষু। পাশাপাশি অধিনায়কত্বে প্রভাবিত করে দেশের রাজনীতিও।
এসবকিছু মিলিয়ে ব্যাটার বাবরের সত্ত্বা যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। নানা মহলে ব্যাটার বাবরকে নিয়ে শুরু হয়েছিল সমালোচনা। তীর্যক কথার বাণের ক্ষত মুখ বুঝেই সহ্য করতে হয়েছে। এরপরই যেন বাবর নিয়েছেন কঠিন এক সিদ্ধান্ত। স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। সবরকম ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়েই সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
এরপর থেকেই যেন পাশার দান পালটে যেতে থাকে। বাবর যেন স্বরুপে ফেরার যাত্রা শুরু করেন এর পর থেকেই। অধিনায়কত্বের বোঝা কাঁধ থেকে নেমে যাওয়ার পরই যেন একটু মন খুলে নিঃশ্বাস নেন বাবর। তারপর থেকেই সাদা বলে ধারাবাহিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে তিনি হয়েছেন মত্ত্ব।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ পাকিস্তান হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। পাকিস্তান খারাপ করলেও বাবর ছিলেন উজ্জ্বল পারফরমারদের একজন। টানা তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি ব্ল্যাকক্যাপসদের মাটিতে। তবুও দিনশেষে তার দল হেরেছে সব ক’টি ম্যাচ।
সেসব পরজায়ের পেছনে বাবরের দায় খুব একটা নেই। তার স্ট্রাইকরেটকে প্রশ্নবিদ্ধ চাইলেই করা যায়। তবে দলের সবাই যখন ব্যর্থতার গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়েছে, তখন তাকে দোষারোপ করাটাও যে বড্ড বেমানান। বাবর যেন স্রেফ এখন হতে চাইছেন ধারাবাহিক। ছাপিয়ে যেতে চাইছেন পূর্বের সবকিছুকেই।
একজন ব্যাটারের জন্যে নিয়ম করা রান করাটাই মুখ্য। ব্যাটে রান এলেই বাড়ে মনোবল। তাতে করে নিজের ব্যাটিংয়ের পরিবর্তন যেমন আনা যায়, তেমনি মনের মত সব শটের পসরা সাজিয়ে ফেলাটাও কঠিন কিছু নয়। তাছাড়া আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলা যেকোন ইনিংসই সুফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
রইলো বাকি স্ট্রাইকরেটের আলাপ। সেটাও বাবর চাইলে বাড়িয়ে নিতে পারবেন হয়ত অদূর ভবিষ্যতে। তার সেই সক্ষমতা রয়েছে। একটা লম্বা সময় রান খরায় ভুগতে হয়েছে তাকে। তিনি রান পেলেও দল হেরেছে। সেই সময়টা থেকে তার বেড়িয়ে আসতে হবে। সে কাজটাই করছেন বাবর। এখন স্রেফ রান করায় মনোযোগ দিচ্ছেন না তিনি। সাথে দলের জয়েও অবদান রাখতে মড়িয়া পাকিস্তানের ব্যাটিং বাদশাহ।
সেই উদাহরণ তো তিনি সৃষ্টিই করেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। নিউজিল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছেন ঢাকায়। নেমেই রংপুর রাইডার্সের জয়ের রেখেছেন অবদান। দলটির হয়ে প্রথম ম্যাচেই ফিফটির দেখা পেয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তাছাড়া দলের কঠিন মুহূর্তে একটা প্রান্ত আগলে রেখেছেন। জয়ের সীমানা দড়ি দলকে পার করিয়েই তবে মাঠ ছেড়েছেন।
বাবর যেন চাইছেন প্রত্যাবর্তনের নতুন এক অধ্যায় রচনা করতে। যেখানে তার করা প্রতিটা রান দলের জয়ে রাখবে অবদান। তিনি যা করতে চান বাইশ গজে তা করার আত্মবিশ্বাসটাই সঞ্চার করছেন বাবর আজম। এবার স্রেফ সময়ের পালা তার সঙ্গ দেওয়ার। সময়কেও তো বসে আনতে চাইবেন তিনি। তবে তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার সংযোজন নিয়ে হবে না কটু কথা। বিপিএল হতে পারে সময়কে বস করবার মঞ্চ। সাথে যুক্ত হবে পাকিস্তান সুপার লিগ।