‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’ কিংবা ‘জাতে মাতাল, তবে তালে ঠিক’ জনপ্রিয় প্রবাদ দুটি ফেলনা নয় মোটেই। অন্তত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্ষেত্রে তো নয়-ই। এই কয়েকদিন আগেই পানশালা কাণ্ডে হয়েছিলেন বিতর্কিত, সমালোচিত। তা হবেন নাই বা কেন? অ্যাডিলেডের সে পানশালায় রক ব্যান্ড ‘সিক্স অ্যান্ড আউট’-এর গান শুনতে গিয়ে যে বন্ধুদের সাথে মদে চুর হয়েছিলেন ম্যাক্সি।
শুধু তাই নয়। মদ্যপ অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল অজি এ তারকা। তবে নামটা তো ম্যাক্সওয়েল। পাঁকা বাংলা ভাষায় তিনি জাতে মাতাল, কিন্তু তালে ঠিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে না হলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে ফিরেছিলেন দলে। আর সেই ফেরাটাও তিনি স্মরণীয় করে রাখলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি দিয়ে। প্রথম ম্যাচে ফিরেছিলেন ১০ রানে। তবে অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় ম্যাচে রীতিমত ক্যারিবিয়ান বোলারদের উপর ঝড় তুলেছেন তিনি।
৫৫ বলে ১২ চার আর ৮ ছক্কায় খেলেছেন অপরাজিত ১২০ রানের ইনিংস। অ্যাডিলেডের হাসপাতালে ভর্তি থাকা সেই মাতালটাই আজ অ্যাডিলেডের মাটিতে নিজের ব্যাটিং দিয়ে চার ছক্কার মোহনীয় মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন পুরো বিশ্বকে। তবে শুধুই কি ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন, সঙ্গে যে গড়লেন রেকর্ডও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচ টা সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন ম্যাক্সির।
যদিও পাঁচ সেঞ্চুরি নিয়ে তাঁর সঙ্গী রোহিত শর্মাও। তবে রোহিত পাঁচটি সেঞ্চুরি পূরণ করতে যেখানে ১৪৩ ইনিংস সময় নিয়েছেন, সেখানে ম্যাক্সওয়েল পাঁচ সংখ্যাটা ছুঁয়ে ফেললেন মাত্র ৯৪ ইনিংসেই। এখানেই তো শেষ নয়। চারে নেমে ম্যাক্সির খেলার ১২০ রানের এই ইনিংসটাই এখন সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চারে নেমে ১১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সুরিয়াকুমার যাদব। অবশ্য সেই রেকর্ডটা এখন অতীত ম্যাক্সির কীর্তিতে।
ম্যাক্সওয়েল এ দিন ক্রিজে এসেছিলেন ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। যদিও ঝড়ে পূর্বাভাস দিতে সময় নেননি তিনি। নিজের খেলা সপ্তম বলেই স্লগে ছক্কা হাঁকান এ ব্যাটার। ম্যাক্সির তাণ্ডবের শুরু সেখান থেকেই। এরপর আলজারি জোসেফ কিংবা আন্দ্রে রাসেল, কেউই পাত্তা পাননি ম্যাক্সওয়েলের উইলোর সামনে। রভম্যান পাওয়েল তো এক ওভারেই হজম করে বসেন টানা তিন চার।
চার, ছক্কার ফুলঝুরিতে ব্যক্তিগত অর্ধশতকে পৌঁছাতে সময় ক্ষেপণ করেননি ম্যাক্সওয়েল। ২৬তম বলেই টপকান পঞ্চাশের গণ্ডি। তবে তখনও যে ঝড়ের আরো বাকি। ফিফটি পূরণের পর বল বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিতে পরিণত করতেই বলতে গেলে নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়েছিলেন এ অজি ব্যাটার।
পঞ্চাশ পূরণ করার পথে প্রথমে ৪ টা চার আর চারটা ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তবে ইনিংসের বাকি ৭০ রানের যাত্রায় তিনি বাউন্ডারিতেই তুলে নেন ৫৬ রান। ৮ টা চার ও চারটা ছক্কা। অবশ্য গোটা ১২০ রানের ইনিংসটাই যে ছিল বাউন্ডারিময়। ১২ চার আর ৮ ছক্কায় ৯৬ রান। আর তাঁর এমন ব্যাটিং তাণ্ডবেই ২৪১ রানের পাহাড়সম সংগ্রহে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে বিতর্ক এর আগেও হয়েছে। তবে সে সব তো অফফিল্ডের কাণ্ড। অনফিল্ডের কাণ্ডও যে তাঁকে আলোচনায় রাখে একই ভাবে। এই চার ছক্কায় মাতানো ম্যাক্সওয়েল যে ক্রিকেটের সত্যিকারের এক এন্টারটেইনার। ম্যাক্সওয়েল যেন এমনই, ‘জাতে মাতাল, তালে ঠিক’ প্রজাতির।