তিন সংস্করণেই বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ ঘোষণার মাধ্যমে কোথায় গিয়ে যেন পঞ্চপাণ্ডবদের নেতৃত্বের একটা আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিও ঘটলো। সাকিবের হাত ধরে প্রায় ১৪ বছর আগে যে যুগের শুরু হয়েছিল, তার শেষটাও হলো সাকিবকে দিয়েই।
পঞ্চপাণ্ডবদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে অধিনায়কত্বের সময়কাল বিবেচনা করলে সবচেয়ে আগে আর সবচেয়ে বেশি মেয়াদে নেতৃত্ব পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২০০৯ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটের নেতৃত্ব দিয়ে শুরু। ২০২৩ এ এসে সেই ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়েই নেতৃত্বের অধ্যায়ের শেষ।
ক্যারিয়ারে ২০১১ ও ২০২৩, দুটো বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর মাঝের দুই বিশ্বকাপে টাইগার জার্সিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে সাফল্যের মানদণ্ডে তিনিই শীর্ষে। আবার বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা সাফল্য, কিংবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনালে যাওয়া- দুটোই এসেছে তাঁর অধীনে।
বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথায় মাশরাফির অধিনায়ত্বে অধ্যায়টাও বেশ সমৃদ্ধ। ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ৮৮ টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মধ্যে জয় এসেছে ৫০ টাতে। অর্থাৎ সাফল্যের হার ৫৬.৮১। জয়ের সংখ্যা কিংবা শতাংশ কোনোটাতেই মাশরাফিকে টপকাতে পারেনি কেউ। এ দিকে ওয়ানডে ফরম্যাটে নেতৃত্বের অধ্যায়টা মিশ্র কেটেছে সাকিব আল হাসানের। বলা চলে, ব্যর্থতার গল্পই বেশি দৃশ্যমান হয়েছে তাঁর অধীনে।
২০১১ বিশ্বকাপে ঘরের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে সেবার গ্রুপ পর্বতেই থেমে যায় বাংলাদেশের যাত্রা। এরপর ২০২৩ বিশ্বকাপে যা হয়েছে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের খেলা ৮ আসরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপের একটি। সব মিলিয়ে ‘অধিনায়ক’ সাকিবের ওয়ানডে পরিসংখ্যানও তেমন সুখকর নয়। ৬২ ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করে ৩৪ টাতেই তিনি হেরেছেন। জয় পেয়েছেন ২৭ টাতে। সাফল্যের হার ৪৩.৫৪ শতাংশ।
টি-টোয়েন্টিতে আবার সাকিবের অধীনে সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেই সংখ্যাটাও বিশাল কিছু নয়। ৩৯ ম্যাচে ১৬ টিতে জয়। একই সংখ্যক জয় নিয়ে সাকিবের সাথেই রয়েছে আরেক পাণ্ডব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ৪৩ টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন ১৬ টি জয়।
টেস্ট ক্যাপ্টেন্সির কথা আসলে সবার আগে আসবে মুশফিকুর রহিমের নাম। বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ৩৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। আবার সর্বোচ্চ ৭ টা ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে তাঁর অধীনেই। সাকিবের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৪। মাশরাফি অবশ্য বাংলাদেশকে একটি টেস্টেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যদিও সে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে সিংহভাগ অংশে মাঠেই ছিলেন না। তবুও সে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।
বাকি রইল তামি ইকবাল। বাংলাদেশকে কখনোই কোনো বৈশ্বিক আসরে নেতৃত্ব দেননি। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপ যাওয়ার পথে ওয়ানডে সুপার লিগে তাঁর অধীনেই বাংলাদেশ তৃতীয় হয়েছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ৩৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া এ অধিনায়ক ম্যাচ জিতেছেন ২১ টি। সাফল্যতার হার বিবেচনায় মাশরাফির পর তাঁরই অবস্থান।
একটা ব্যাটন বদল হল। পঞ্চপাণ্ডবের পর নেতৃত্বের ব্যাটন আনুষ্ঠানিকভাবে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে। শান্ত কি পারবেন এই পাঁচ পাণ্ডব কিংবা সাবেক অধিনায়কদের ছাপিয়ে যেতে? সেটা হয়তো সময়ই বলে দিবে। তবে আপাতত অবসান ঘটলো একটা বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের। পঞ্চপাণ্ডব হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুব বড় সাফল্য দেখিয়ে যেতে পারেনি। তবে সাফল্যের দিকে চোখ রাখতে শিখিয়েছে তারাই প্রথম। শান্ত নিশ্চয়ই সেই সাফল্যের সন্ধানে ছুটবেন টাইগার জার্সি গায়ে, দুরন্ত গতিতে।