ধারাবাহিক আগ্রাসনের দুর্বার হৃদয়

ধারাবাহিকতা, পাশাপাশি স্ট্রাইকরেট- দু’টোই দারুণভাবে সামাল দিচ্ছেন তাওহীদ হৃদয়। গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে জাতীয় দলের রাস্তা খুঁজে নিয়েছিলেন হৃদয়। এবারের আসরে সেই রাস্তার পেছন ফেরার পথটাই যেন বন্ধ করতে চাইছেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনিই যে দশম বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে এই আসরের প্রথম ফিফটির দেখাটাই পেয়েছেন হৃদয়। এদিনও তিনি পেয়ে যেতে পারতেন সেঞ্চুরি। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে অনবদ্য সেঞ্চুরিটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। মাঝের একটি ম্যাচে অবশ্য তিনি শূন্যরানে ফিরেছিলেন। তবে এক ম্যাচ বাদেই নিজের সক্ষমতার প্রমাণটা আরও একবার রাখলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।

বিপিএল দিয়েই যেন ক্যারিয়ারের মোড় পালটে যেতে শুরু করেছে তাওহীদ হৃদয়ের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর তেমন কোন আলোচনায় ছিলেন না তিনি। বিপিএলে ফরচুন বরিশালের শিরোপা হাতছাড়ার পেছনে তাকেই দায়ী করা হয়েছিল। সে সময়টাকে পরিশ্রম দিয়ে পেছনে ফেলেছেন। নিজেকে বদলে ফেলে বনে গেছে আস্থাভাজনদের একজন।

এবারের বিপিএলে খানিকটা আড়ালেই ছিলেন শুরুর দিকে। যদিও নিয়মিত রানের মধ্যেই ছিলেন তিনি। তবুও প্রত্যাশিত পারফরমেন্সের অভাবটা ছিল বটে। কিন্তু হুট করেই সব আলো নিজের করে নিতে চাইছেন যেন তিনি আরও একটিবার।

অন্তত আগের দিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যা করেছে, তার তুলনায় মামুলি টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেছিল কুমিল্লা। তবে শুরুতেই প্যাভিলিয়নে লিটন কুমার দাস। আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান উইল জ্যাকসও ফিরেছেন দ্রুতই। তবে কুমিল্লাকে পুরোটা সময় জুড়ে নির্ভার রেখেছেন তাওহীদ হৃদয়। দলের জয় নিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন তরুণ এই ব্যাটার।

আগ্রাসনের চূড়ান্ত রুপই ধারণ করেছিলেন তিনি। প্রায় ১৯৪ স্ট্রাইকরেটের একটা ইনিংস খেলে গেছেন তিনি। অপরাজিত থেকেছেন ৯১ রানে। মাত্র ৪৭ বলের এই ইনিংসটিতে সমান সংখ্যক ছক্কা-চার হাঁকিয়েছেন। কখনো স্কোয়ার লেগ, কখনো আবার স্ট্রেইট শটে বল পাঠিয়েছেন মাঠের বাইরে। সাতটি ছক্কার মারে তিনি আনন্দে ভাসিয়েছেন চট্টলার দর্শকদের।

সেই সাথে ৭টি চারও এসেছে তার ব্যাট থেকে। তাতে করেই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বনে গেছেন তাওহীদ হৃদয়। ৩৪১ রান নিয়ে সবার উপরে অবস্থান করছেন তিনি। প্রায় ১৬০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে যাচ্ছেন তিনি এবারের আসরে। মনোমুগ্ধকর ব্যাটিংয়ের সাথে সাথে আগ্রাসনের সামঞ্জস্যতা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন তাওহীদ হৃদয়।

১৯টি ছক্কা নিয়ে বসে আছেন সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোরদের তালিকার শীর্ষে। দেশীয় ব্যাটারদের হাতে শক্তি নেই। সেই ধারণাই যেন পালটে দিচ্ছেন হৃদয়। দেশীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই আলো বিকিরণ করে যাচ্ছেন তিনি।

একটু হলেও আফসোস নিশ্চয়ই করবেন তিনি। আরও একটি সেঞ্চুরি যে ছিল হাতের নাগালেই। দুর্বার গতিতে ছুটে চলা হৃদয়ের জন্যে সেটা ছুঁয়ে ফেলা নিঃসন্দেহে ছিল না কঠিন কোন কাজ। তাই হয়ত হৃদয় খানিকটা অভিমানের সুরে অভিযোগ জানাতে চাইবেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের প্রতি। তবে ম্যাচ শেষে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হাতেই বিনয়ী হৃদয় নিজের পরিকল্পনার মাঝেই থাকার বাণী শুনিয়ে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link