‘সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’- এই পৃথিবীর সবচেয়ে রুঢ় সত্য। টিকে থাকতে হলে প্রতিটা মুহূর্তে লড়াই চালাতে হয়। একটু দেরিতে হলেও সে বিষয়টি সম্ভবত অনুধাবন করতে পেরেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ফিরে আসার নতুন গল্পের সূচনা তিনি করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। শত প্রত্যাশার সমাধান হওয়ার চেষ্টাই যেন করছেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর গড়িয়েছে অনেকটা। এই আসরের শুরুর দিকে বিষাদের কালমেঘ ঘিরে ধরেছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে। ফিটনেস ইস্যুতে ছেড়ে যেতে হয়েছিল ফরচুন বরিশালের শিবির। তবে টুর্নামেন্টের মাঝপথে তিনি ফিরেছেন দলের সাথে। যোগ্যতম হয়েই তবে ফিরেছেন। ব্যাটে, বলে দলের জন্যে পারফরম করে যাওয়ার ব্রত নিয়েই ফিরেছেন তিনি।
ফরচুন বরিশালের সপ্তম ম্যাচে প্রথমবারের মত একাদশে জায়গা হয় সাইফউদ্দিনের। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সেই ম্যাচটা হারতে হয়েছিল বরিশালকে। স্রেফ ১৪৬ রানের টার্গেটও পার করতে পারেনি বরিশাল। তবে সেই ম্যাচেই নিজের প্রত্যাবর্তনের প্রথম পঙক্তি লিখেছিলেন সাইফউদ্দিন।
প্রথমে বল হাতে স্রেফ ২৪ রান খরচায় নিয়েছিলেন একটি উইকেট। এরপর ব্যাট হাতে শেষদিকে ক্যামিও খেলেছেন ১৬৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে। ১৮ বলে তার করা ৩০ রানের কল্যাণেই পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে পেরেছিল ফরচুন বরিশাল। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে এরপরের ম্যাচে সাইফউদ্দিনের শিকার ৩ উইকেট। ২১ রান দিয়ে দলের জয়কে হতে দেননি হাতছাড়া।
নিজের ব্যক্তিগত তৃতীয় ম্যাচেও সাইফউদ্দিন দেখিয়েছেন ঝলক। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে সেই ম্যাচে ৬ বলে ২৩ রানের এক বিধ্বংসী ক্যামিও ইনিংস খেলেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে ১৮৬ অবধি পৌঁছায় ফরচুন বরিশালের সংগ্রহ। ৩৮৩.৩৩ স্ট্রাইকরেটের সেই ইনিংস খেলার পর বল হাতেও দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। সেই ম্যাচেও তিনটি উইকেট যুক্ত হয়েছে তার ঝুলিতে।
ঠিক এমন পারফরমেন্সই তো ছিল সাইফউদ্দিনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত। ইনিংসের মিডল ওভারগুলোতে বল করে এনে দেবেন ব্রেকথ্রু। ব্যাটিং ইনিংসের শেষভাগে মারকুটে ব্যাটিং করে দলের সংগ্রহ বাড়িয়ে নেবেন কিংবা ছিনিয়ে নেবেন জয়। তবে ইনজুরির বাঁধায় সাইফউদ্দিন একটা পর্যায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন।
কিন্তু এবার তিনি বেশ সতর্ক। নিজের ফিটনেস নিয়েও বাড়তি সতর্ক। পরিশ্রমও বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। পরিশ্রম নিশ্চয়ই বিফলে যায় না। সাইফউদ্দিনের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তার বোলিংয়ের পুরনো ধার যেন একটু একটু করে ফিরতে শুরু করেছে। বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ও দিচ্ছেন তিনি বাইশ গজে।
দুই দিকে বল সুইং করার দক্ষতা ছিল তার। ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ারে সেটা হারিয়ে যেতে বসেছিল। তবে এবারের বিপিএলে আবারও সেই সুইং ফিরেছে। নির্বিষ বোলিং অন্তত তিনি করছেন না এদফা। তাছাড়া স্লোয়ার বলের ভাল মিশেলও ঘটাচ্ছেন তিনি। ব্যাটার ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলের গতির তারতম্য ঘটাচ্ছেন। ছন্দে ফেরার রাস্তা ধরেই ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন।
একটা সময় বেন স্টোকস, হার্দিক পান্ডিয়াদের মত করেই সাইফউদ্দিন বাংলাদেশকে সার্ভিস দেবেন বলেই ধারণা করা হত। তবে সময়ের পরিক্রমায় সেই ধারণার মৃত্যু ঘটতে শুরু করে। কিন্তু আরও একটিবার তিনি সেই আশার প্রদীপে জ্বালানির সঞ্চার ঘটাতে শুরু করেছেন। হয়ত শেষবারের মত। এবার অন্তত সেই আশার প্রদীপ নিভে যেতে দেবেন না মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।