চোখের জন্য আপনার ব্যাট করতে সমস্যা হচ্ছে… প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসু মনে প্রশ্নটা শেষও করতে পারেন নি। ভরা প্রেস কনফারেন্সে তাঁকে ভড়কে দিয়ে সাকিব আল হাসান বলে উঠলেন, ‘আপনাকে কে বলেছে চোখের জন্য সমস্যা হচ্ছে?’
সাকিব যখন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে কথাটা বললেন, তখনও তাঁর ব্যাট কথা বলেনি, শূন্য বাউন্ডারিতে মোটে ৪ টা রান সঙ্গী। সাকিবের অনন্যতা যে এখানেই। সীমাবদ্ধতাকে ঢাল বানান না। উল্টো মুখিয়ে থাকেন পারফর্ম করার লক্ষ্যে, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে।
ব্যাট হাতে সাকিব আদৌ জ্বলে উঠবেন কিনা, এই নিয়ে শঙ্কা, ধোঁয়াশা যখন মিলেমিশে একাকার, ঠিক তখনই চট্টগ্রাম পর্বে এসে দেখালেন নিজের ব্যাটিং স্বত্ত্বা। ফিরলেন তো ফিরলেনই, চলতি আসরের সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটি আদায় করে নিয়ে জানান দিলেন। সেটি যে কোনো ফ্লুক ইনিংস ছিল না, তার জন্যও দরকার ধারাবাহিকতা। সেই ধারাবাহিকতায় আবারো ফিফটি হাঁকালেন এ অলরাউন্ডার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় খেললেন ৬২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।
রংপুর রাইডার্সের হয়ে শুরু আক্রমণটা চালিয়েছিলেন রনি তালুকদার। কিন্তু ইনিংস বড় করতে গিয়েই আটকে যান এ ব্যাটার৷ একই পরিণতি ব্রেন্ডন কিংয়েরও। নুরুল হাসান সোহানও বেশিক্ষণ ক্রিজে সঙ্গ দিতে পারলেন৷ দলের এই যখন অবস্থা তখন কোনোমতে দেড়শো পেরোনোর লক্ষ্যে চোখ রংপুর শিবিরের।
কিন্তু ক্রিজে তো রয়েছেন সাকিব। শুরুর অস্বস্তি ভেঙ্গে এ ব্যাটার ঠিকই সময়মতো তাণ্ডব চালালেন। আর তাঁর তাণ্ডবেই ১৮৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় রংপুর।
সাকিবের এ ইনিংস খেলার পথে অবশ্য সঙ্গ দিয়েছিলে শেখ মেহেদীও। তাঁর সাথে গড়লেন ৬৮ রানের জুটি। আর ঐ জুটিই দলকে গড়ে দেয় বড় রানের ভিত্তি। অথচ প্রথম ১০ ওভার শেষে ৬৭ রান তুলেছিল রংপুর। সেখান থেকে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে দলকে বড় রানের সংগ্রহ এনে দেওয়ার নেপথ্যে লড়ে গেলেন সাকিবই।
টুর্নামেন্টের শুরুর ভাগে সাকিবের চোখের সমস্যাই হয়ে উঠেছিল প্রধান চর্চার বিষয়। এমন আলোচনা বোধহয় বিষিয়ে তুলেছিল সাকিবকেও। তাই ব্যাট হাতে বিপিএলে বিস্ফেরণ ঘটাচ্ছেন তিনি। শত সীমাবদ্ধতাও যেন নতজানু হয়ে ওঠে। অবশ্য রাজার রাজত্ব তো এমনই হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের এই রাজত্বের এখনই ইতি নয়। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে এসে এটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন সাকিব।