রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে অভিনন্দন। তাদের জন্য খুব খুব এবং খুবই লাভজনক চুক্তি। জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পন্সরশিপ থেকে সরে যাওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর আবার তারা ফিরে এসেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য ক্রিকেটে তাঁরা যুক্ত হতে পেরেছে অতি স্বস্তায়।
সামনে বাংলাদেশের অনেক অনেক ম্যাচ। আগামী সাড়ে তিন বছরে পত্রিকায়, টিভিতে, অনলাইনে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘রবি’ যেভাবে উপস্থাপিত হবে, যেভাবে ফুটে উঠবে, যত স্ক্রিনটাইম তারা পাবে, যত প্রচার পাবে, সেটির অর্থমূল্য নির্ধারণ করা গেলে হয়তো বোঝা যাবে, ৫০ কোটি টাকা মানে স্রেফ পানির দরে তারা পেয়ে গেছে এটা।
ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে কাজ করা কোনো পেশাদারি প্রতিষ্ঠান হয়তো সত্যিকারের সম্ভাব্য অর্থমূল্য বের করতে পারবে। তবে রবি এতটা স্বস্তায় পেয়েছে, এটা অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব, তাদের সাফল্য। কিন্তু, বিসিবির জন্য?
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সাহারার সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি বাতিলের পর ২০১৫ সালে রবির সঙ্গে চুক্তি হয় বিসিবির। সেবার অবশ্য একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জিতে পরে রবির হাতে তুলে দেয় স্পন্সরশিপ। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন জানানো হয়নি টাকার অঙ্ক।
তবে, তা দুই বছরের জন্য ৪২ কোটি টাকার আশেপাশে ছিল বলে জানা গিয়েছিল নানা সূত্র থেকে। পরে ২০১৭ সালে আবার দুই বছরের জন্য রবি চুক্তি করে ৬৪ কোটি টাকায়। সেটির মেয়াদ শেষের ১০ মাস আগে তারা সরে দাঁড়ায়।
টাকার অঙ্ক একটু এদিক-সেদিক হতে পারে। কারণ, এবার টাকার অঙ্ক স্পষ্ট করে জানালেও বেশির ভাগ সময়ই বিসিবি এসব নিয়ে লুকোচুরি করে। নানা সূত্র থেকে আমাদের জানতে হয়। যাহোক, ২০১৭ সালে ২ বছরের জন্য ছিল ৬৪ কোটি টাকা। এখন সাড়ে তিন বছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা।
সবশেষ দারাজের সঙ্গে যে চুক্তি ছিল, সেটির তুলনায় অবশ্য রবির কাছ থেকে বেশিই পাচ্ছে বিসিবি। তবে আদতে যে এই অঙ্কটা ‘বেশি’ নয়, এটা তো নিশ্চিতই। ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স ভালো-মন্দ যেমনই থাকুক, বাংলাদেশে কোনো কিছু প্রচারের জন্য ক্রিকেটের চেয়ে বড় কোনো উপকরণ আর নেই। ধারেকাছে কিছু নেই। কিন্তু, বিসিবি কি পারছে সেই পণ্যকে কাজে লাগাতে?
রবির সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে যেমন বিসিবি বলছে, তাদের কাছে এটিই আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। আয়-টায় কমে যাওয়ার যে কোনো প্রসঙ্গেই বিসিবি থেকে সবসময় বলা হয় ‘বাংলাদেশের বাস্তবতা’র কথা। এই দেশের বাস্তবতা তো মাথায় রাখতেই হয়। কিন্তু সেসব বাস্তবতার মধ্যেই ক্রিকেট থেকে যতটা আয় করা সম্ভব, সেটির সর্বোচ্চটা কি পারছে বিসিবি?
একটা বিপিএল থেকে ২০-৩০ কোটি টাকা আয় করে তারা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। বাংলাদেশের বাস্তবতার কথা বলে, প্রতি বছরই। অথচ তাদের কাজ হলো, এই বাস্তবতার সীমানা বাড়ানো।
একটু ভালো ব্র্যান্ডিং করলে, আরেকটু পেশাদার হলে, আরও গুছিয়ে করতে পারলে বিপিএল থেকেই আরও অনেক গুণ বেশি আয় করা সম্ভব। ক্রিকেট নামক পণ্যকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগাতে পারলে বা সেভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ব্রডকাস্ট রাইটস থেকে আরও কত বেশি আয় করা সম্ভব, টিম স্পন্সরশিপ, অন্যান্য স্পন্সরশিপ থেকে কত বেশি আয় করা সম্ভব!
তবে বিসিবি খুশি, আমাদের হাবিজাবি আফসোস-আক্ষেপে কী আর আসে-যায়! আরেকটা বিষয়, মঞ্চের ব্যাকড্রপে যে বোলারকে দেখা যাচ্ছে, আপনি ঠিক ধরেছেন, বোলারটি বাঁহাতি জিমি অ্যান্ডারসন!
– ফেসবুক থেকে