পেশিতে পেশিতে যেন শক্তির বিচ্ছুরণ। ‘অতিমানবীয়’ বিশেষণটাও যেন ছাপিয়ে যায় তাঁর চিরায়ত তাণ্ডবে। একটু অনসাইড ঘেঁষা ব্যাটিং স্ট্যান্স। কিন্তু তাতে কী! তিনি যে মিড অন, মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারেন অনায়সেই। বোলারদের চোখ গগনে তুলে দিতে বাধ্য করেন। আর সে কারণেই তো হোক আইপিএল কিংবা সিপিএলের মঞ্চ। আন্দ্রে রাসেলের তাণ্ডব দৃশ্য দেখতে মুখিয়ে থাকে সবাই।
এই দৃশ্যায়নে বিপিএল বাদ যাবে কেন? আগের দিন লিটন দাস ভেবেছিলেন, রাসেল ম্যাচটা জিতিয়ে আসবেন। রাসেল তা পারেননি। সেই না পারায় ব্যর্থতাই যেন মনের ভিতরে একটা বারুদের বিস্ফোরণ ঘটাল ড্রে রাসের। সাগরিকায় বিপিএল শেষ করলেন এক ছক্কা নৃত্য দিয়ে। চট্টলার গ্যালারি তাতে উল্লাসে ভেসেছে, উৎসবে ফেটে। এ জন্যই তো ক্যারিবিয়ান এ পাওয়ার হিটারকে বলা হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা।
কুমিল্লা জয়ের পথেই হেঁটেছিল। শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, রাসেল বুঝি ব্যাটিংয়েই নামবেন না। কিন্তু সব সমীকরণ পাল্টে দিলেন সাকিব আল হাসান। ২ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট নিয়ে যথারীতি লড়াই জমিয়ে দেন এ অলরাউন্ডার। একটা সময় সমীকরণ গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ বলে ৪৪। অসম্ভব সমীকরণ হয়ত না। তবে ততক্ষণে সেট হওয়া দুই ব্যাটার লিটন আর তাওহীদ ফিরে গিয়েছেন।
নতুন ব্যাটার হিসেবে তাই রাসেলের সামনে ছিল প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা তিনি উতরে গেলেন চোখের পলকেই। ৩০ বলে ৪৪ রানের সমীকরণটা তিনি টপকে যান ১৫ বল হাতে রেখেই। এর মধ্যে হাসান মাহমুদের করা এক ওভারেই তিনি হাঁকান ৩ টা চার আর ২ টা ছক্কা। অবশ্য তাণ্ডবের শুরুটা করেছিলেন আগের ওভারে করা ইমরান তাহিরের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে।
এরপর আর ম্যাচ জয়ের মুহূর্তের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়নি কুমিল্লা শিবিরকে। জয়ের শেষ মুহূর্তটাও রাসেল রাঙান একটা ছক্কা মেরে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। যে ইনিংস খেলার পথে তিনি হাঁকান ৪ টা চার ও ৪ টা ছক্কা। অর্থাৎ বাউন্ডারি থেকেই ক্যারিবিয়ান এ ব্যাটার তুলে নেন ৪০ রান।
কেন তিনি বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোয় ‘হটকেক’, কেন তাঁকে দলে পেতে মুখিয়ে থাকে দলগুলো, সেটি আরও একবার প্রমাণ করলেন আন্দ্রে রাসেল। তাঁর সৌজন্যে এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসও পৌঁছে গেল সেরা দুইয়ে। অর্থাৎ আরো একবার ফাইনালে ওঠার এখন হাতছানি তাঁর সামনে। শেষ বার কুমিল্লার শিরোপাজয়ী সদস্য ছিল। এর পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই আবারো ঘটাতে চাইবেন ড্রে রাস।