একটা দারুণ টাইমিংয়ের ফ্লিক। ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে বিশাল ছক্কা। ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্ত ‘ফিনিশড দ্য ম্যাচ ইন স্টাইল’। পুরোদস্তুর অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম জয়। আত্মবিশ্বাসের খালি কুয়োতে এক পসলা ভারি বর্ষণ। শান্ত যে আবারও ফিরলেন রানের ধারায়।
১৬৫ রানের লক্ষ্যমাত্রায় জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার। সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের ৬৮ রানের জুটি ভরসা জুগিয়েছে সিরিজে সমতা ফেরানোর। দলকে স্রেফ জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিতে হতো কাওকে। সে দায়িত্বই নিয়েছেন শান্ত।
একেবারে ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ বলতে যা বোঝায় আরকি। ৩৮ বলে ৫৩ রানের এক দারুণ ইনিংস! ১৩০.৪৭ স্ট্রাইকরেটে এই ইনিংসে ভর করেই ১১ বল হাতে রেখেই জয় খুঁজে পায় বাংলাদেশ। তাতে করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে চলে আসে ১-১ সমতা।
জয়টা অবশ্যই ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগের ম্যাচে ২০৭ রানের টার্গেটে তিন রানে পরাজিত হয়েছিল টাইগাররা। সেই ম্যাচটাই বরং আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে গোটা দলের। সেখান থেকেই দলকে জয়ের ধারাতে ফেরালেন শান্ত। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলের জয়ের রাখলেন অবদান।
অথচ গেল ম্যাচে পরাজয়ের পর আঙুল উঠেছিল তার দিকে। ওঠাটাও ছিল স্বাভাবিক। কেননা বিশাল এক জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ২২ বলে ২০ রান করেছিলেন শান্ত। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে গেল বছরটা দারুণ কাটিয়েছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন ভীষণ আস্থাভাজন।
সেই আস্থার জায়গা থেকেই প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ১১ খানা ডটবল খেলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। তবে দিন বদলের সাথে বদলে গেলেন শান্তও। দ্বিতীয় ম্যাচেই দেখালেন ঠিক কেন তাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে অধিনায়ক হিসেবে। একটা দারুণ দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে তিনি জানান দিলেন আবারও ধারাবাহিক হবেন তিনি।
দলের দুই ওপেনারের দ্রুত প্রস্থানের পর ব্যাটিংটা সামলাতে হতো কাওকে। সেটাই করলেন। আজকের দিনটায় অবশ্য রানের চাপ খানিকটা হলেও কম ছিল। তবুও অধিনায়ক হিসেবে একটা ‘স্টেটমেন্ট’ দেখাতেই হতো শান্তকে বাইশ গজে। তিনি সেটাই করেছেন। শেষের ছক্কাসহ ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এরপর ৪ খানা বাউন্ডারিও এসেছে তার ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত জয় আর এক ফালি চওড়া হাসি নিয়ে মাঠে ফিরেছেন শান্ত।
এই ইনিংসটা শান্তর জন্যে ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দলের জন্যেও প্রয়োজনীয়। কেননা গোটা দশম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই শান্ত ছিলেন না রানের ধারায়। নবম আসরে যিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সেই শান্তর ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি দশম আসরে।
স্বাভাবিকভাবেই জেগেছিল শঙ্কা- শান্ত তবে ফুরিয়ে গেলেন? সামনেই যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ঠিক তার আগেই অফ ফর্মের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার সংশয়। সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে শান্ত ফিরলেন স্বরুপে। দলের জয়, দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর নিজের ব্যাটে রান- সবকিছু একত্র করে শান্ত জানান দিলেন প্রত্যাবর্তনের।