রিশাদদের বসিয়ে রাখার স্পর্ধা আর ফিরে না আসুক!

গেল বছরের কথা। ডিপিএলে প্রথমে কোনো দল পাননি রিশাদ হোসেন। শেষমেশ টুর্নামেন্ট শুরুর প্রাক্কালে তাঁকে দলে ভেড়ায় আবাহনী। কিন্তু সেটাও অনেকটা দয়াদাক্ষিণ্যে। ওই সময় আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন রিশাদকে দেরি করে দলে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানান, রিশাদ দল না পেয়ে মন খারাপ করবে বলে না কি তাঁকে দলে নিয়েছেন তিনি।

তবে দল পেলেও ওই মৌসুমে রিশাদ খেলার সুযোগ পান মাত্র দুটি ম্যাচ। অথচ তাঁর দল আবাহনী ম্যাচ খেলে মোট ১৬টি।

এতে করে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। যুগ যুগ ধরেই আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগ স্পিনাররা অবহেলার শিকার হয়ে আসছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁরা যেন পরিবারের মেজো ছেলে। তাঁদের প্রতিই যত বিমাতাসুলভ আচরণ! যে কারণে জাতীয় দলে খেলার পরেও ডিপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচ সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দেওয়াটা এখানকার লেগিদের জন্য নিত্য ঘটনা।

আসলে বাংলাদেশে লেগ স্পিনারদের ওপর দলগুলো একটুও আস্থা রাখে না। কান পাতলেই তাঁদের সম্পর্কে একটা কথা নিয়মিত শোনা যায়- লেগ স্পিনাররা খরুচে। এমনকি বিসিবি ২০১৯ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিটা দলের একাদশে অন্তত একজন করে লেগি খেলানোর নিয়ম করে দিলেও তা মানা হয়নি।

সে বার জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের একাদশে জুবায়ের হোসেন লিখন ও রংপুর বিভাগের একাদশে রিশাদ হোসেনকে না খেলানোয় বরখাস্ত হন দল দুটির প্রধান কোচ জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ পারভেজ রাজন। তাছাড়া বোর্ড সভাপতি কর্তৃক ওই বছরের বিপিএলে প্রত্যেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির একাদশে অন্তত একজন করে লেগ স্পিনার খেলানো এবং পুরো চার ওভারের কোটা পূরণ করার কথা বলা হলেও মানেনি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। শুধু তা-ই নয়।

ওই বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হওয়া বিপিএলের বিশেষ আসর বঙ্গবন্ধু বিপিএলে বিসিবির অধীনে সবগুলো দল গঠিত হওয়ার পরেও এই নিয়ম মানা হয়নি এবং বিসিবি দ্বারা কোনো প্রকার শাস্তিরও ব্যবস্থা করা হয়নি।

মোটা দাগে এই হচ্ছে আমাদের দেশে লেগ স্পিনারদের হাল। এ কারণেই টেস্ট খেলুড়ে প্রায় সবগুলো দলে নিয়মিতভাবে লেগ স্পিনার দেখা গেলেও আমাদের দলে তা কালেভদ্রে দেখা যায়। আবার দেখা গেলেও পর্যাপ্ত ব্যবহার করা হয় না।

এই মুহূর্তে যেমন একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে আমার। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের হাতে বল তুলে দেওয়া হয় একদম শেষ ওভারে, জয়ের জন্য যখন প্রতিপক্ষের কেবল দুই রান প্রয়োজন।

যদিও সম্প্রতি চান্দিকা হাতুরুসিংহের নেতৃত্বে জাতীয় দলে অন্তত চিত্রটা পালটেছে। এখন টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিতই রিশাদকে দেখা যাচ্ছে এবং আজকের পর থেকে ওয়ানডে দলেও নিশ্চয় একই দৃশ্য দেখা যাবে।

এই রিশাদ আসলে বাংলাদেশের অবহেলিত লেগ স্পিনারদের একজন বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এই উত্থান নিশ্চয় দেশের অন্যান্য লেগিদের নতুন করে আশা জোগাবে, অনুপ্রাণিত ও পুনরুজ্জীবিত করবে।

আশা করি, ঘরোয়া ক্রিকেটের চিত্রটাও এবার ধীরে ধীরে বদলাবে, যার শুরুটাও হবে রিশাদকে দিয়েই। বর্তমানে জাতীয় দলে বলে-ব্যাটে পারফর্ম করা এই রিশাদকে গেল বছরের মতো ঘরোয়া ক্রিকেটের একাদশে উপেক্ষা করার স্পর্ধা কার বলুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link