আমিরাতের নতুন চমক ওয়াসিম

আবুধাবি টি-টেন লিগে ক্রিস গেইলের ১২ বলের ঐতিহাসিক হাফ সেঞ্চুরি তখনও বাসি হয়নি। এর মধ্যেই আবারো এক একই কাজ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেটার ওয়াসিম মোহাম্মদ।

ওয়াসিম মোহাম্মদ ক্রিকেটে নতুন এক নাম। এই ইনিংস দেখার পর অনেকেই ভাবতে বসেছেন, কে এই ওয়াসিম!

ওয়াসিম মোহাম্মদকে বলা হচ্ছে আরব আমিরাত ক্রিকেটের পরবর্তী তারকা। তিনিই পারবেন আরব আমিরাত ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ওয়াসিম মোহাম্মদের জন্ম ১৯৯৪ সালে পাকিস্থানের পাঞ্জাব প্রদেশের মিইয়ান চান্নু শহরে। শহরের পশ্চিম দিকে দেড় ঘন্টা চললেই পাওয়া যাবে মুলতান শহরের দেখা। ওয়াসিমের জন্মস্থান থেকে উত্তরে তিন ঘন্টার পথ পিরিয়ে যেতে হয় ফয়সালাবাদ শহরে আর উত্তর দক্ষিণে চার ঘন্টার পথ পেরিয়ে লাহোর।

ওয়াসিমের জন্মস্থান বিখ্যাত খুশি বারফির জন্য। যা একধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার। আর মিয়ান চুন্নু শহরের নামকরণ হয়েছে এক ধর্মপ্রচারকের নামে। মিয়ান চুন্নু শহর মুলত সুতা এবং ভূট্টার জন্য বিখ্যাত। ছাড়াও পাকিস্থান এখানে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা বসিয়েছে।

ওয়াসিমের মোহাম্মদের ক্রিকেটের শুরু ১৬ বছর বয়েসে ২০১০ সালে। অন্যান্য পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের মতই তারও ক্রিকেটের হাতেখড়ি টেপ টেনিস বলে। ২০১২ সালে শাখি শাহবাজ কাপে অংশগ্রহণ করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন টেপ টেনিস বলের ক্রিকেটার। একই বছর তিনি সু্যোগ পান বুড়েওয়ালার রশিদ লতিফ ক্রিকেট একাডেমিতে।২০১৭ সালে লাহোরে খেলার সময় মুদাসসির আলি নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে আরব আমিরাতে সুযোগ পান। সেখানে মুদাসসির আলির প্রতিষ্ঠান এমজিএম কোম্পানির ক্রিকেটার হিসেবে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে।আবুধাবি টি-টেন লিগে নর্থান ওয়ারিওর্সে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত এই ওপেনার খেলেন এমজিএম কোম্পানির হয়ে।

টি-টেন লিগে প্রথমবারের মত অংশগ্রহন করেন ২০১৯ সালে মারাঠা অ্যারাবিয়ানসের হয়ে। কিন্তু বলার মত কিছু করতে পারেন নি। এমনকি এইবারের টি-টেন লিগে প্রথম দুই ম্যাচে সাইড বেঞ্চে থেকেছিলেন। ওয়াসিম মোহাম্মদ দলের চতুর্থ ম্যাচে তিনি ৩৪ বলে ৭৬ রানের একটি ইংনিস খেলেন। একই দিনে তিনি খবর পান তার আন্টি মারা যান।তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করেন। পরের ম্যাচেই খেলেন ১৩ বলে ৫৩ রানের একটি ইনিংস। এই ইনিংস সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় এবং সবাই তার উপর নজর রাখতে শুরু করে।

৫৩ রানে ইনিংদস খেলার জন্য তিনি সাতটি ছয় এবং তিনটি চার মারেন। মনির হোসেনের এক ওভারে তুলেন ৩৫ রান। যেখানে ছিলো মাত্র একটি ডট বল। ৯৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তার এই মারকুটে ইনিংসে মাত্র ৪.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নর্দান ওয়ারির্স। ১৩ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে নিয়ে গেইলের কাছ থেকে সম্পূর্ণ আলো কেড়ে নেন ওয়াসিম মোহাম্মদ।

আবুধাবি টি-টেন লিগের আগেও এই রকম দূর্দান্ত ইংনিস খেলেছেন ওয়াসিম মোহাম্মদ। ওয়াসিম বেশ কিছুদিন ধরেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নজর কাড়ছিলেন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এমিরেটস ডি-টোয়েন্টি লিগে ফুজাইরার হয়ে খেলেছিলেন। সেখানে ইংনিসের গোড়াপত্তন করেন আরব আমিরাত জাতীয় দলের ওপেনার রোহান মুস্তাফার সাথে। এমিরেটস ডি-টোয়েন্টি লিগ শেষ করেন সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তলিকায় শীর্ষে থেকে। যেখানে তিনি টুর্নামেন্টের সর্ব্বোচ্চ চারটি অর্ধ শতক হাঁকান এবং সর্ব্বোচ্চ গড়ের অধিকারী ছিলেন। এমিরেটস ডি-টোয়েন্টি লিগে তার ব্যাটিং গড় ছিলো ৫৩.৪০। শারজাহতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তার দল হেরে গেলেও তিনি ৬০ বলে ১০১ রানের একটি অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কি বিশ্বকাপে ফিরবে? পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি লিগ কি অস্থিরাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? সম্ভবত দুইটি উত্তরই হ্যাঁ।

ওয়াসিমের আশা তিনি অতি শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরব আমিরাতকে প্রতিনিধিত্ব করবেন। ওয়াসিম মোহাম্মদ এই গ্রীষ্মেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলার যোগ্য হয়ে উঠবেন। তিনি আশা করেন তিনি অতি দ্রুতই আরব আমিরাতের ঘয়ে খেলবেন। ওয়াসিম নিজ মাতৃভূমির হয়ে খেলতে পছন্দ করবেন। পাকিস্তান ক্রিকেটের নির্বাচকরা আইসিসির নিয়মের প্রতি তাকিয়ে আছেন। তিনি যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রান করেন তবে সেটাও পাকিস্তা ক্রিকেটের জন্য সন্মানজনক।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link