নতুন বছর-সাদা পোশাক-পুরনো বাংলাদেশ

নতুন দশক কিংবা নতুন বছর কোনোটিই পরিবর্তন আনতে পারলো না সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পার্ফরমেন্সে। সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। পরাজয় বড় ব্যাপার না, যেভাবে বাংলাদেশ দল হেরেছে – সেটা সত্যিই ছিল লজ্জাজনক।

অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্সের রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে নাকানিচুবানি খাওয়ালো ক্যারিবিয়ানরা। মায়ার্স-বোনারদের দেখে মনে হচ্ছিলো চন্দরপল-সারওয়ানরা আবার ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছে!

যে দলটায় হোল্ডার, রস্টন চেজ, শাই হোপ, ডরিচদের মতো প্রথম সারির খেলোয়াড় নেই সেই খর্বশক্তির দ্বিতীয় সারির দল ঘরের মাঠে নাস্তানাবুদ করলো স্বাগতিকদের এই দায় কি বর্তাতে পারবে বিসিবি?

ক্যারিবিয়ানরা দূর্দান্ত খেলে এই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু যে দলটার বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই নতুন, ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা মায়ার্স ও বোনার দু’জনেই অভিষিক্ত। দেশের বাইরে এশিয়ার মাটিতে তারা যেভাবে খেলেছে ২০ বছরের বেশি ক্রিকেট খেলে আমরা কি আদৌ এমন কোনো অর্জন সাদা পোশাকে দেখাতে পেরেছি?

‘ক্যাচ মিস মানেই ম্যাচ মিস’ যুগে যুগে ক্রিকেট বিশ্বে প্রচলিত এই কথার যথার্থতা ২২ গজে আবারো প্রমাণ করলো বাংলাদেশ দল। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত ছাড়াও ক্যাচ মিস, স্টাম্পিং চান্স মিস, সঠিক ভাবে রিভিউর ব্যবহার না করার মাশুল বেশ ভালোভাবেই দিলো তাঁরা। উইকেটের পিছনে লিটন যেনো এক স্থির মূর্তি!

লেগ বিফোরে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা যেই উইকেটরক্ষকের থাকে সেখানে লিটন ছিলো নির্বাক প্রায়। মাঠে সাকিবের অনুপস্থিতি বেশ ভুগিয়েছে দলকে, কিন্তু এক সাকিব নেই তাতেই কি এই ২য় সারির দলের বিপক্ষে আমরা ঘরের মাঠে বিধ্বস্থ! শুধু কিপিং কিংবা ফিল্ডিং নয়, অধিনায়কত্বেও দেখা গেছে দূর্বলতা। বোলিং পরিবর্তন কিংবা বোলারদের সঠিক ভাবে অধিনায়ক ব্যবহার করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন না ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।

পুরো একাদশে মাত্র এক পেসার! ম্যাচের আগে পর্যন্ত কথা হচ্ছিলো একাদশে তিন পেসার থাকবে নাকি দুই পেসার। সেখানে ম্যাচের দিন একাদশে মাত্র এক পেসার! অথচ বিদেশের মাটিতে সিমিং কন্ডিশনে খেলতে গেলে প্রতিনিয়ত আমরা পেস বিভাগে দূর্বল সেটার প্রমাণ পাই, তারপরেও কেনো বিসিবির টনক নড়ে না! সে ব্যাখা আদৌ আছে কারো কাছে?

নিউজিল্যান্ড সিরিজে টেস্ট নেই সে হিসেবে হয়তো এক পেসার খেলানো, কিন্ত দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক পেসার আবু জায়েদ রাহী একাদশে বাইরে! স্কোয়াডে ৪ পেসার থাকলেও সুযোগ পেলেন শুধুমাত্র ফিজ। তাহলে বাকিরা কিভাবে নিজেদের প্রমাণ করবেন? বিদেশের মাটিতে তারা কিভাবে সফল হবে এর জবাব কি আছে বিসিবির কাছে?

উইকেটের ব্যাপারেও বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয় প্রতি সিরিজেই। ঘরের মাঠে স্পিন উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চিন্তায় মগ্ন থাকা বাংলাদেশ দলের নিজেদের করা মরণফাঁদে ফেললো ক্যারিবিয়ানরা! আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে একই ভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছিলো বাংলাদেশ দল। এতো হারের পরেও কেনো বানানো হয়না স্পোর্টিং উইকেট? কেনো আমাদের পেসাররা সুযোগ পায় না?

একটা দল ২০ বছর ক্রিকেট খেলার পরেও ঘরের মাঠে প্রতিনিয়ত খর্বশক্তির দলের কাছে পরাজিত হচ্ছে! এর চেয়ে বড় লজ্জার কিছু আছে? এভাবে কবে উন্নতি হবে?  সাদা পোশাকে কবে বড় কোনো অর্জন আসবে? এসব ভাবনা কি আছে ক্রিকেট বোর্ডের?

প্রথম দিন থেকে চতুর্থ দিন প্রতিটি দিনই ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে চট্রগ্রাম টেস্টে চালকের আসনেই ছিলো স্বাগতিকরা। কিন্তু শেষদিনে সাগরিকায় সম্পূর্ণ উলটো চিত্র! প্রথম ইনিংসে যাদের কিনা দুইশো করতেই কষ্ট হচ্ছিলো সেই দলই শেষদিনে রেকর্ড জুটিতে টাইগারদের শক্তিশালী স্পিন শক্তির বিপক্ষে জয় তুলে নিলো!

যেই স্পিন আমাদের মূল শক্তি! সেই স্পিনের বিপক্ষেই তারা যেভাবে সাবলিল ব্যাটিং করেছে মনেই হয়নি তারা দেশের বাইরে খেলছে! স্পিন শক্তিতে তাদেরকে কুপোকাত করতে না পারলেও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৩ রান করতে কর্নওয়াল-ওয়ারিকানদের ঘূর্ণিতে স্বাগতিকদের ৮ উইকেট নেই! ব্যাপারটা অবাকই লাগে।

ঘরের মাঠে ঢাকায় ২০১২ সালে উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে করা ৫২৭ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে টাইগাররা করে ৫৫৬ রান! ২৯ রানে পিছিয়ে থাকা ক্যারিবিয়ানরা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় মাত্র ২৭৩ রানে! ২৪৪ রানে অল্প লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শেষ দিনে শেষ সেশনে মাত্র ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে ঘরের মাঠে ৭৭ রানে হারে বাংলাদেশ দল! সেদিনও ক্রিকেট ভক্তরা বুকভরা আশা নিয়ে মাঠে ছিলো, টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসে ছিলো বাংলাদেশের জয় দেখার অপেক্ষায়! না সেদিনও পারেনি আজও পারলো না তারা।

এমন হারের পর মনে একটা প্রশ্ন বরাবরই জাগে, আদৌ কি টেস্ট খেলার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের? টেস্ট স্ট্যাটাসের মান কি আমরা রাখতে পেরেছি? নতুন ভাবে সবকিছু শুরু হলেও সাদা পোশাকে দলটা পুরোনোই রয়ে গেলো। আর কত এমন লজ্জাজনক পরাজয় দেখতে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link