টি-টোয়েন্টি তে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়ে হারের অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালোরে ভারতের কাছে হারা ম্যাচটা উল্লেখ করা যেতে পারে।
ওয়ানডেতেও একই অভিজ্ঞতা অনেকবার হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনালটাই, আপাতত স্মরণ করুন।
টেস্ট ক্রিকেটে ‘তীরে এসে তরী ডুবানো’ হার আমাদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে খুব বেশী নেই। ২০০৩ মুলতান টেস্টের কথা এখন মনে পড়ছে। সেখানে অবশ্য পাকিস্তানই ফেবারিট ছিল। আমরা তাদের হারাতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পারিনি। সদ্য সমাপ্ত হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টটা এ ফরম্যাটে বাংলাদেশের জন্য নতুন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হয়ে গেল। যেখানে ম্যাচের বাকি ছিল মাত্র ২.৩ ওভার। অমন অন্তিমে গিয়ে ম্যাচ হারা, চারদিন দাপট দেখানোর পরও শেষ দিনে পরাজিত দলের আসনে নিজেকে আবিষ্কার করার অভিজ্ঞতা তো আমাদের জন্য নতুনই বটে, অন্তত টেস্টে।
এই তো গত মাসে ব্রিসবেনে ঋষভ পান্তের বীরত্বে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ৩ উইকেটের অনন্য জয়ে আমরা বিমলান্দ পেয়েছিলাম। ক্রিকেট রোমান্টিকরা মোহিত হয়েছিলাম ম্যাচের পঞ্চম দিনে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ভারতের রান তাড়ার মিশন দেখে।
মাস না পার হতেই কাইল মেয়ার্সের মাধ্যমে পান্তের চরিত্র ধরা দিল আমাদের আঙিনায়। এমন অভাবনীয় কর্মের শিকার হওয়ায় দুঃখবোধ থাকতে পারে, হজম করা কঠিন হতে পারে; কিন্তু ক্রিকেটে এসব হয়ে থাকে, এটুকু নিশ্চিত। বেশিরভাগ সময় হয়তো আমরা দর্শক হিসেবে উপভোগ করি, এবার মেয়ার্সের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং কীর্তির ভারে নিজেরাই ডুবে গেলাম।
মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে জোর সমালোচনা চলছে। দল ম্যাচ হেরেছে, অধিনায়ককে কাঠগড়ায় তোলা হবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না ম্যাচটা শুধু অধিনায়ক একা খেলেন না।
সার্জারি হওয়া আঙুলে ব্যথা পাওয়ার পরও তিনি মাঠে ফিরেছেন। ভুল, অপরিপক্কতা, অনভিজ্ঞতা নিয়েই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, দায়িত্বটা তাকে বিসিবি দিয়েছে। নিজে চেয়ে নেননি। এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরি ও লিটনের ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশের লিডটা চারশো ছুঁইছুঁই হয়েছে। না হয় কি হতো; থাক, চিন্তা না করি।
জয়ের দুয়ারে এসে হেরে যাওয়া চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে নিশ্চিতভাবেই অধিনায়ক মুমিনুল অনেক কিছু শিখবেন, সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও।
পর্যবেক্ষণ:
গাইতে গাইতে গায়েন হয়, কিন্তু পরিতাপের বিষয় গত এক বছর একটাও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছেন এক বছর পর। সর্বোপরি লঙ্গার ভার্সনে এত অনিয়মিত হয়ে ধারাবাহিক সাফল্য আশা করাটা সমীচিন নয়।
মুমিনুল-ডমিঙ্গো টেস্ট সংস্কৃতি গড়ার কথা বলেছেন অনেকবার। কিন্তু বাস্তবে হাঁটছেন উল্টো পথে। পেসাররা আগের মতোই ব্রাত্য একাদশে। স্বল্পমেয়াদী লাভ খুঁজতে গিয়ে টেস্ট দলকে গড়ে তোলার দীর্ঘমেয়াদী মিশনকে উপেক্ষা করছেন তারা। পেসার না তৈরি করে টেস্ট দলকে বলার মতো শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।
সাগরিকার উইকেট কি ধোঁকা দিল?
পঞ্চম দিনের উইকেট যেমন স্পিনবান্ধব হওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন সবাই, কিন্তু সাগরিকার উইকেটে সবার আশার প্রতিফলন দেখা যায়নি। স্পিনাররা ডেডলি হয়ে উঠতে পারেননি। মেয়ার্স-বনাররা অনায়সেই খেলে গেছেন দিনভর।
মজার বিষয় হলো, অতীতেও সাগরিকায় এমন নজির দেখা গিয়েছিল। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্টের কথা। হাথু যখন লঙ্কান কোচ হয়ে প্রথমবার বাংলাদেশে আসলো।
ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন অধিনায়ক, ইনজুরির কারণে সাকিব ছিলেন না দলে। প্রথম ইনিংসে মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে ৫১৩ রান করে বাংলাদেশ। তিন সেঞ্চুরিতে লঙ্কানরা প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ৭১৩ রান তুলে। চতুর্থ দিনের বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। হাথু ও শ্রীলঙ্কার ধারণা ছিল পঞ্চম দিনে উইকেট ভাঙবে, ২০০ রানে পিছিয়ে থাকা স্বাগতিকদের দ্রুত অলআউট করা যাবে দ্বিতীয় ইনিংসে। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ চতুর্থ দিনেই। পঞ্চম দিনে উইকেট খোলনলচে বদলে যায়নি। মুমিনুলের সেঞ্চুরি, লিটনের ক্যারিয়ার সেরা ৯৪ রানে ম্যাচ বাঁচিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ দিনে সাগরিকার উইকেট হতাশা উপহার দিয়েছিল হাথু এন্ড কোংকে।
যুক্তি:
পঞ্চম দিনেও উইকেট না ভাঙার একটা বাস্তবিক যুক্তি গতকাল শুনেছিলাম সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ভাইয়ের কাছে। তার মতে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির রোদ, এপ্রিল-মে তথা গরমের রোদে পার্থক্য আছে। তাপমাত্রা ফারাক অনেক। বছরের শুরুতে পড়া রোদে মাটি ভাঙে না। এপ্রিল মাসের রোদে মাটিতে ফাটলও ধরে।
পাইলট ভাইয়ের যুক্তিটা আমার মনে ধরেছে