মিরপুরে আজ বসন্ত আসেনি

ফাগুন মাসের প্রথম দিন। আনুষ্ঠানিক ভাবে শীতের শেষে শুরু হয়েছে বসন্ত। বাতাসে পাখির গানের ডাক, গাছে নতুন পাতা, নতুন ফুল। কিন্তু, মিরপুর শেরে বাংলায় অন্য আবহ, শোকের আবহ – সেখানে আসেনি বসন্ত। মেহেদী হাসান মিরাজ শেষ একটা চেষ্টা করেছিলেন, তাতে তাঁর সাহস প্রকাশ করেছে, হারের ব্যবধান কমেছে। কিন্তু, বসন্তের সুবাতাস আর আসেনি।

ওয়ানডে সিরিজে অসহায় আত্নসমর্পণের পর সবাই ধরেই নিয়েছিলো টেস্ট সিরিজও দাপটের সাথেই জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত এটা সত্যও প্রমাণিত করেছিলো স্বাগতিকরা। কিন্তু টেস্টের পঞ্চম দিন থেকেই পরিবর্তন হতে থাকে দৃশ্যপট; আত্নবিশ্বাসী হতে থাকে ক্যারিবিয়ানরা।

প্রথম টেস্টের শেষ দিনে অবিশ্বাস্য ভাবে হেরে যায় বাংলাদেশ। বিস্ময়ের শেষ সেখানেই নয়; দ্বিতীয় টেস্টেও প্রায় পুরোটা সময় দাপট দেখিয়ে স্বাগতিকদের ১৭ রানে হারিয়েছে সফরকারীরা।

অথচ পুরো তিন দিন পিছিয়ে থাকলেও চতুর্থ দিন বোলারদের সৌজন্যে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছিলো বাংলাদেশ। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের প্রয়োজন ছিলো ২৩১ রান। যদিও ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের নেই। তাই চ্যালেঞ্জটা কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু ছিলো না স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের জন্য।

২৩২ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে তামিম ইকবাল। টার্নিং উইকেটে ধীরগতিতে না খেলে নতুন বলে আক্রমণাত্মক খেলে মাত্র ৪৪ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ওপেনিং জুটিতে মাত্র ১২ ওভারে ৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ।

জুটি ভাঙ্গতে বল হাতে নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ম্যাচের দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়া শুরু করে তখন থেকেই। ব্র্যাথওয়েটের প্রথম বলেই কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার (১৩)। সঙ্গী হারিয়ে বেশীক্ষণ থাকতে পারেননি তামিম ইকবালও।

ব্র্যাথওয়েটের নির্বিষ একটা বলে ড্রাইভ করে শর্ট কাভারে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৪৬ বলে ৫০ রান। তামিমের বিদায়ের পর উইকেটে এসে সিরিজ জুড়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত (১১) ফ্লিক করতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন আজও। ৩ উইকেটে ৭৮ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দিনের শেষ সেশনেও ভাগ্য বদলাতে পারেনি বাংলাদেশ। চা বিরতি থেকে ফিরেই মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মাদ মিথুনকে হারালে জয়ের স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে বাংলাদেশের। মুশফিক ১৪ ও মিঠুন ১০ রান করে যখন বিদায় নেন তখন ১১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পথহারা বাংলাদেশের ইনিংস।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মমিনুল হক ও লিটন দাস চেস্টা করলেও জয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিলো না সেটা। ৩২ রানের জুটি গড়ার পর ওয়ারিক্যানের বলে রাকিমের হাত ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মমিনুল হক (২৬)। এরপর একে একে ফিরে যান লিটন দাস (২২) ও তাইজুল ইসলাম (৮)।

১৬৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন পরাজয়ের প্রহর গুনছে তখন ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখান মিরাজ-নাঈমের নবম উইকেট জুটি। ১৪ রান করে নাঈম হাসান আউট হয়ে গেলে শেষ উইকেটে আবু জায়েদকে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান মিরাজ। কিন্তু শেষ চেস্টা করেও দলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। জয় থেকে ১৭ রান দূরে থাকতে স্লিপে ক্যাচ দেন মিরাজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে রাকিম কর্নওয়াল ৪ টি এবং ওয়ারিক্যান ও ব্র্যাথওয়েট ৩ টি করে উইকেট শিকার করেন। এক কথায়, ক্যারিবিয়ান স্পিনারদের কাছেই হেরেছে বাংলাদেশ দল।

এর আগে দিনের শুরুতে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে মাত্র ১১৭ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন বোনার। এছাড়া সিলভার ব্যাট থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ রান।

৪ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন তাইজুল ইসলাম। এছাড়া নাঈম হাসান ৩ টি, আবু জায়েদ রাহি ২ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ শিকার করেন ১ টি উইকেট।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪০৯/১০ (১৪২.২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১১৭/১০ (৫২.৫)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯৬/১০ (৯৬.৫) ও দ্বিতীয় ইনিংস: ২১৩/১০ (৬১.৩) তামিম- ৫০, সৌম্য- ১৩, শান্ত- ১১, মমিনুল- ২৬, মুশফিকু- ১৪, মিঠুন- ১০, লিটন- ২২, মিরাজ- ৩১, তাইজুল- ৮, নাঈম- ১৪; কর্নওয়াল- ৩০-৫-১০৫-৪, ওয়ারিক্যান- ১৬.৩-৪-৪৭-৩, ব্র্যাথওয়েট- ১১-১-২৫-৩)

ফলাফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ী।

ম্যাচ সেরা: রাকিম কর্নওয়াল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

সিরিজ সেরা: এনক্রুমা বোনার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link