আমাদের দেশে পেস বোলারদের অভাব একদম শুরু থেকেই। কালের পরিক্রমায় মাশরাফি, শাহাদাত, মুস্তাফিজ, তাসকিন, রুবেল, আল-আমিনদের মতে প্রতিভাবান পেসার যে রকম পেয়েছে বাংলাদেশ; তেমনি সময়ের স্রোতে হারিয়েও গেছেন অনেক পেসার।
এরকমই একটি নাম তালহা জুবায়ের, অকালে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি এক পেসার। তাঁর সময়ে দলের অন্যতম সেরা বোলিং সেনসেশন ছিলেন তালহা জুবায়ের। তাঁর প্রতিভা নিয়েও কখনো সন্দেহ ছিলো না কারো। তবে তাকে পরিচর্যা করার মত আর্থিক সামর্থ্য তখন ছিল না বাংলাদেশের। ফলাফল দ্রুতই হারিয়ে যান এই পেসার।
২০০২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক হয় তালহার। ৭ টেস্টে ১৪ উইকেট আর ৬ ওয়ানডেতে ৭ উইকেট পাওয়ার পর থেমে যায় তালহার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। থমকে যাওয়া ক্যারিয়ার নিয়ে তালহার হতাশা আছে; আছে আক্ষেপ ও অভিযোগও।
কক্সবাজারে বাংলাদেশের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে এসেছেন তালহা জুবায়ের। এখানে এসে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে তালহা তাঁর ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বাক বদলের কথার সাথে জানিয়েছেন বর্তমান পেসারদের হাহাকারের কথাও।
চোট মুক্ত হয়ে খেলতে পারলে তালহা কেমন করতেন সেটা এখন বলা অনেকটাই কঠিন। তবে নিজকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো প্রতিভা ও সামর্থ্য দুটোই ছিলো এই পেসারের ভিতর। কিন্তু অ্যাকশনের কারণে বারবার চোটর পড়েছেন তালহা। তালহা জানিয়েছেন চোটে পড়ার পর বোর্ড থেকে কোন সাহায্যও পাননি তিনি। চিকিৎসা করতে হয়েছে নিজের খরচেই; চোট মুক্ত হতে যা পর্যাপ্ত ছিলো না তালহার জন্য।
আক্ষেপ নিয়ে এই পেসার বলেন, ‘অবশ্যই অ্যাকশনের সমস্যাই ছিল। আমার মিক্সড অ্যাকশন ছিল। কিন্তু আমার এই ইনজুরি নিয়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে সাহায্যটা পাইনি, ট্রিটমেন্ট বা গাইডলাইন। নিজের খরচেই করিয়েছি। কিন্তু ওটাও যথেষ্ট ছিল না।’
তালহার সমানে সুযোগ ছিলো নিজকে সেরাদের পর্যায়ে নিয়ে আসার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী পেস বোলার অ্যান্ডি রবার্টস ঢাকায় একটা ক্যাম্প করতে এসে দুজন পেসারকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে সেই দুজনের আরেক জন ছিলেন তালহা জুবায়ের। মাশরাফি নিজকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেও তালহা আছেন আক্ষেপ হয়েই। তালহা জানিয়েছেন এখনো কষ্ট হয় তাঁর।
তালহা বলেন, ‘অ্যান্ডি রবার্টসকে অবশ্যই মনে পড়ে। আমার জীবনের শুরুটা ওখান থেকেই। ঐ ক্যাম্পের পর ও আমার আর মাশরাফির কথাই বলে গিয়েছিল। আমাদের দুজনের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার হয়নি, মাশরাফির হয়েছে। আমার ইনজুরিগুলো সাপোর্ট করেনি আমাকে। ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে অনেক কষ্ট লাগে।’
তালহা জুবায়ের কথা বলেছেন বর্তমান পেসারদের নিয়েও। দীর্ঘ দিন হলো বাংলাদেশের কোন পেসারের টেস্টে পাঁচ উইকেট নেই। এমনকি অধিনায়ক, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা অর্জনের মতোও পারফর্ম নেই তাদের। তালহা মনে করেন দোষটা পেসারদের নয়; পেস সহায়ক উইকেট বানালেই ভালো করবেন পেসাররা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক পেসার আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও আসবে। কিন্তু আপনি যদি ফ্ল্যাট উইকেট দেন তাহলে আমরা কোথায় বোলিং করবো। এত ফ্ল্যাট উইকেটে খেললে আসলে ঐ গতিটা থাকেনা, বডিও সাহায্য করেনা। পেস বোলিং কিন্তু অনেক কষ্টের ব্যাপার। এত দূড় থেকে দৌড়ে আসবেন কিন্তু আপনি দেখবেন ফলাফল হল হাঁটুর উপরে বল উঠছেনা। উইকেট কিপার পর্যন্ত বল পৌছাচ্ছে না। এটা দেখে ডিমোরালাইজড হয়ে যায় বোলাররা। রিদমটাও নষ্ট হয়ে যায়।’
এই পেসার আরো বলেন, ‘উদাহারণ যদি দিতে যাই তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেড় মাসের ট্যুর শেষে দেশে ফিরে আবাহনী মাঠে টানা অনেকদিন উইকেট কিপার ৩০ গজের মধ্যে রেখে বল করেছি। কিন্তু এটা যত সময় গেছে রিদম নষ্ট হতে হতে কিপার আবার ১৫ গজের মধ্যে চলে এসেছে। আমি বলছিনা দক্ষিণ আফ্রিকার মত উইকেট বানানোর। কিন্তু অন্তত পেস বোলারদের বলটা যেন ক্যারি করে। তাতে ভালো বল হবে, ব্যাটসম্যানকেও কোয়ালিটি বল বেশি ফেস করতে হবে। এখন স্পিনে ভালো, তখন পেসেও ভালো হবে।’
বাস্তবতাটা জানা আছে তালহারও। তিনি ভালো করেই জানেন উপমহাদেশে চাইলেই পেস সহায়ক উইকেট সম্ভব না। এরপরেও পাইপলাইনে থাকা পেসারদের নিয়ে দারুণ আশাবাদী তালহা।
তিনি বলেন, ‘শেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যারা ছিল শরিফুল, সাকিব ছিল। মৃত্যুঞ্জয়ও ছিল যদিও সে ইনজুরিতে থাকায় খেলতে পারেনি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো একজন খেলোয়াড় হবে। ওর যে সামর্থ্য, ক্যালিবার আশা করি ও ভালোভাবে কামব্যাক করবে। বাংলাদেশকে ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে। এই দলে বেশ কিছু তরুণ পেসার আছে। যারা আমাদেরকে ভালো একটা কিছু উপহার দিতে পারবে।’