বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম এখন উদ্বোধনের দুয়ারে চলে এসেছে। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
আহমেদাবাদে অবস্থিত সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণ ক্ষমতা এক লাখ দশ হাজার! যা বিশ্বের যেকোনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তুলনায় সর্বোচ্চ। আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি ভারত-ইংল্যান্ডের পিংক বলের টেস্টের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি।
পুরো নাম সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল স্টেডিয়াম। গুজরাট ক্রিকেট এসোসিয়েশন দ্বারা পরিচালিত এই স্টেডিয়ামটি পুনঃসংস্কারের আগে দর্শক ধারণক্ষমতা ছিলো ৪৯০০০ প্রায়। ১৯৮২ সালে নির্মাণ করা এই স্টেডিয়ামটি ২০১৫ সালে নতুন ভাবে তৈরির জন্য ভাঙ্গা হয়। কারণ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের লক্ষ্য ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি এখানে করার। এরপর ২০১৭ সালে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম। নাম সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়াম হলেও লোকমুখে প্রচলিত নাম মোতেরা স্টেডিয়াম।
২০১৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই স্টেডিয়ামটি উদ্ভোধন করেন।
১৯৮৩ সালের ১২ই নভেম্বর ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হয় এই মোতেরা স্টেডিয়ামের। এরপরের বছর ১৯৮৪ সালের ৫ই অক্টোবর ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে রঙিন পোশাকে যাত্রা শুরু হয় স্টেডিয়ামটির। সবশেষ ২০১২ সালের ১৫ই নভেম্বর ভারত-ইংল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচের পর সাদা পোশাকে অনুষ্ঠিত হয়নি আর কোনো ম্যাচ। এবং ২০১৪ সালের ৬ই নভেম্বর ভারত-শ্রীলঙ্কার ওয়ানডেই ছিলো এখানে অনুষ্ঠিত শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
এই মাঠে অবশ্য বেশ কিছু সুখস্মৃতি রয়েছে ভারতের। এই মাঠেই নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন লিটল মাস্টার খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার। ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে ভারত-পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুনিল গাভাস্কার এই মাঠেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
অবশ্য একটা দুঃস্মৃতিও আছে! ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডেল স্টেইনের তোপে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথম দিনের প্রথম সেশনে মাত্র ৭৬ রানে অলআউট হয় ভারত! ভারতের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে অলআউট হবার ঘটনাও এই একবারই।
বিশ্বকাপের অনেক ম্যাচ অবশ্য এই মাঠে গড়িয়েছে। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় এ মাঠেই। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের হোস্টও ছিলো এই মোতেরা স্টেডিয়াম। সে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ১১ রানে পরাজিত করে ইংলিশরা। ভারতের আরেকটি বড় অর্জনের পথে এই স্টেডিয়ামও ছিলো সাক্ষী! ২০১১ বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত।
আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার ৩য় টেস্ট! যেটি কিনা হবে গোলাপি বলে। অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচেই গোলাপি বলের ঐতিহাসিক সাক্ষী হচ্ছে আহমেদাবাদের এই মোতেরা স্টেডিয়াম। আরেকটি অবাক করা ব্যাপার! ২০১৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারিতেই উদ্ভোধন করা হয় নতুন এই স্টেডিয়ামটি, তার ঠিক ২ বছর পর একই দিনে আন্তজার্তিক ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করবে মোতেরা স্টেডিয়াম।
গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ এখন অপেক্ষায় রয়েছে এক ঐতিহাসিক মূহুর্তের। সম্ভাব্য প্রায় ৫৫ হাজার দর্শককে সুযোগ দেওয়া হবে মাঠে বসে ৩য় টেস্ট দেখার৷ ফ্লাড লাইটের আলোয় গোলাপি বলের জাদু দেখবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে মোতেরা স্টেডিয়াম।